খার্তুমে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে জনগণের বিক্ষোভ
ছবি: এএফপি

সুদানের একনায়ক ওমর আল বশিরকে ২০১৯ সালে উৎখাত করার পর দেশটিতে বেসামরিক ও সামরিক নেতাদের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগির ভিত্তিতে একটি সরকার হয়। বেসামরিক ও সামরিক নেতাদের সমন্বয়ে ওই সরকার গঠনকে দেশটির গণতন্ত্রের দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া হিসেবে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু গত মাসে দেশটিতে যে সামরিক অভ্যুত্থান হয়ে গেল, তার মাধ্যমে দেশটিতে এখন কি আর গণতন্ত্রের কোনো আশা আছে—সেই প্রশ্ন উঠেছে।

২০১৯ সালের এপ্রিলে সেনাবাহিনী এবং বিদ্রোহীদের সশস্ত্র বিপ্লবী সংগঠন ফোর্সেস অব ফ্রিডম অ্যান্ড চেঞ্জ (এফএফসি) একজোট হয়ে তৎকালীন বশির সরকারকে বিপ্লবী কায়দায় উৎখাত করে। বশিরকে তারা একজোট হয়ে উৎখাত করলেও তাদের মধ্যে শুরু থেকেই অবিশ্বাস ছিল। কিন্তু সমঝোতামূলক সরকার গঠন করা ছাড়া সে সময় তাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা ছিল না। বশিরকে সরানোর পরপরই ক্ষমতা ভাগাভাগির ভিত্তিতে ‘ট্রানজিশনাল সভরিনটি কাউন্সিল’ নামে একটি পর্ষদ গঠন করা হয়েছিল। এর নেতৃত্বে ছিল সেনাবাহিনী।

সাংবিধানিক চুক্তি অনুযায়ী কথা ছিল, ২০২১ সালের নভেম্বরে (চলতি মাসে) এ পর্ষদ বেসামরিক নেতাদের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা ছেড়ে দেবে। কিন্তু প্রথম থেকেই বেসামরিক নেতারা সন্দেহ করে আসছিলেন, সেনাবাহিনী তাঁদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেবে না। অন্যদিকে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যে এ আশঙ্কা তৈরি হয় যে ‘রাস্তার লোকেরা’ ক্ষমতায় এসে গেলে তঁারা যে অর্থনৈতিক সুবিধা ও অগ্রাধিকার ভোগ করেন, তা হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।

সেই ভাবনা থেকেই সেনাপ্রধান (এবং ট্রানজিশনাল সভরিনটি কাউন্সিলের প্রধান) জেনারেল আবদুল ফাত্তাহ আল-বুরহান গত ২৫ অক্টোবর সামরিক অভ্যুত্থান ঘটান এবং প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদোকের সরকারের স্থলে অরাজনৈতিক সরকার বসানোর আহ্বান জানান। বুরহান বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো এফএফসির ওপর অযাচিত প্রভাব খাটিয়েছে এবং দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি করেছে।

বুরহান আশা করেছিলেন, এই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে যেকোনো অভ্যন্তরীণ শক্তি দাঁড়াতে চাইলে তাদের দমন করা সহজ হবে। কারণ, এফএফসির মধ্যে অনেকগুলো ভাগ আছে। এফএফসির অনেক সদস্য অর্থনৈতিক অগ্রগতি না হওয়ায় সরকারের কঠোর সমালোচনা করছিলেন। তিনি আরও ভেবেছিলেন, গত জুলাইয়ে তিউনিসিয়ায় অভ্যুত্থান হওয়ার পর আন্তর্জাতিক মহলে যে রকম মৃদু প্রতিক্রিয়া হয়েছিল, সুদানের ক্ষেত্রেও সে রকম মৃদু প্রতিক্রিয়া আসবে।

কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই বুরহানের ধারণা ভুল প্রতিপন্ন হয়েছে। এ অভ্যুত্থানে কোন্দলরত বিরোধীরা এখন সেনাশাসনের বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়েছেন। রাজধানী খার্তুম ও দেশটির অন্য বড় শহরগুলোতে সব বয়সের নারী-পুরুষ রাস্তায় নেমে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে এবং গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা না হলে দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও তাঁরা হুমকি দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও বেশ সোচ্চার হয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সেনা অভ্যুত্থানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন সুদানের সদস্যপদ স্থগিত করে দিয়েছে এবং বড় বড় দাতা প্রতিষ্ঠান তাদের আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম বন্ধ করে রেখেছে।

এখন সুদানের রাজনৈতিক অবস্থা খুবই নাজুক অবস্থায় আছে। মধ্যস্থতার চেষ্টা চলছে। কিন্তু সব পক্ষের এক সিদ্ধান্তে আসা সহজ হবে না। কারণ, ক্ষমতার ভাগাভাগির বিষয়ে সব পক্ষের তুষ্টি নিশ্চিত করা এখন খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা
হস্তান্তরের বিষয়ে কয়েকটি বড় বাধা রয়েছে। এর একটি হলো প্রতিরক্ষা খাতের সংস্কার উদ্যোগ থেমে আছে। আরেকটি হলো এখনো কিছু বিদ্রোহী গ্রুপকে শান্ত করা সম্ভব হয়নি।

সামরিক কর্মকর্তাদের ক্ষমতা খর্ব হলে তা জেনারেলদের নিরাপত্তাহীনতায় ফেলে দিতে পারে, এ ভাবনার কারণে সেনাবাহিনী ক্ষমতার ভাগাভাগির দিকে আপাতত যেতে রাজি নয়। সেই দিক থেকে বিবেচনা করলে সুদানের আবার গণতন্ত্রের দিকে ফেরা সহজ হবে না।

ইংরেজি থেকে অনূদিত, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

ইসহাক দিওয়ান প্যারিসের স্যাকলে নরমাল স্কুলের অধ্যাপক ও

ইব্রাহিম এলবাদাবি সুদানের সাবেক অর্থমন্ত্রী