সেপ্টেম্বরেই বিশ্ববিদ্যালয় খোলা সম্ভব

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিকৌশল বিভাগের বারান্দা
ফাইল ছবি: দীপু মালাকার

বিধিনিষেধ শেষ হলো। পরিপত্রে সব প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা নেই। আপাতত ৩০ আগস্ট পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনা চালু আছে। চলমান অচল অবস্থা আর না বাড়ালে ১ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীদের টিকাদানের বিষয়টি জড়িত মর্মে বিভিন্ন সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বলতে শোনা গেছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পথ প্রসারিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ইতিমধ্যে টিকার আওতায় আনা হয়েছে। সারা দেশে ওয়ার্ড পর্যায়ে বিস্তৃত বিশেষ টিকাদান কর্মসূচিও ছাত্র-ছাত্রীদের টিকার আওতায় আসা আরও সহজ করবে। এসব কর্মসূচি কার্যকরভাবে অব্যাহত থাকলে আশা করা যায়, আগামী এক মাসের মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বেশির ভাগ ছাত্র-ছাত্রী টিকার আওতায় আসবেন। তাই সংগত কারণেই প্রশ্ন ওঠে, বিশ্ববিদ্যালয় কবে খুলছে?

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিগগিরই খোলার বিষয়ে নাগরিক সমাজের বড় একটা অংশের জোরালো মত রয়েছে। সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অনেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে জোরালো মত দিয়েছেন। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মতামত কী, তা আমাদের জানা নেই। এই প্রেক্ষাপটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর অনলাইনভিত্তিক একটি সমীক্ষা পরিচালনা করছে। এই সমীক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীদের টিকা গ্রহণের অগ্রগতি এবং কবে নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় খোলা উচিত, তা নিয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। এখানে এই সমীক্ষার কিছু প্রাথমিক ফলাফল উদ্ধৃত করা হলো।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিগগিরই খোলার বিষয়ে নাগরিক সমাজের বড় একটা অংশের জোরালো মত রয়েছে। সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অনেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে জোরালো মত দিয়েছেন।

সমীক্ষায় ১০ আগস্ট পর্যন্ত অংশগ্রহণকারী ৪১০ জনের বেশির ভাগই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ৭৩ শতাংশ টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন এবং ২০ শতাংশ ইতিমধ্যে দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন। ৩৪ শতাংশ এক ডোজ টিকা পেয়েছেন। বাকি ৪৬ শতাংশ এখনো কোনো টিকা নেননি। তবে তাঁদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ চলমান বিশেষ টিকা কর্মসূচি থেকে টিকা নিতে আগ্রহী বলে মত প্রকাশ করেন। তাই এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে আশা করা যায়, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা দুই ডোজ টিকার আওতায় আসবেন।

সংক্রমণের হার এখন কিছুটা নিম্নগামী। সেপ্টেম্বরে সংক্রমণ হয়তো সহনীয় পর্যায়েও আসতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়টা নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর। আশা করি সরকার শিগগির এ বিষয়ে প্রো–অ্যাকটিভ সিদ্ধান্ত নিয়ে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করবেন

টিকা গ্রহণের স্ট্যাটাস অনুযায়ী কখন বিশ্ববিদ্যালয় খোলা উচিত, এ প্রশ্নের উত্তরে ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থী দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পক্ষে মত দেন। ১২ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, ৫০ ভাগ শিক্ষার্থীকে দুই ডোজ টিকা দেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় খোলা যায়। ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী সব শিক্ষার্থীকে এক ডোজ টিকা প্রদানের পর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পক্ষে মত দেন। আর ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী টিকা গ্রহণের অগ্রগতি যা-ই হোক, আগস্টের শেষে বা সেপ্টেম্বরের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। অন্যদিকে মাত্র ১২ শতাংশ শিক্ষার্থী সংক্রমণ ৫ শতাংশে পৌঁছানোর পর বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন।

এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যাচ্ছে, দুই ডোজ টিকা দেওয়া সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বেশ জোরালো। যেহেতু টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি এসেছে, সেহেতু বিশেষজ্ঞদের মতামত সাপেক্ষে এবং বেশির ভাগ ছাত্র-ছাত্রীর মতামত অনুযায়ী সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।

উল্লেখ্য, সংক্রমণের হার এখন কিছুটা নিম্নগামী। সেপ্টেম্বরে সংক্রমণ হয়তো সহনীয় পর্যায়েও আসতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়টা নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর। আশা করি, সরকার শিগগিরই এ বিষয়ে প্রো–অ্যাকটিভ সিদ্ধান্ত নিয়ে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করবেন।


ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট