আবেদন ফি কমানো হোক

সম্পাদকীয়

স্নাতক পর্যায়ে গুচ্ছভুক্ত ২২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যে ভর্তির আবেদন ফি ২৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা কতটা যৌক্তিক? এতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেট ভারী হলেও ভর্তি-ইচ্ছুক লাখ লাখ শিক্ষার্থী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

গত ৭ এপ্রিল উপাচার্যদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বৈঠকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার ফি আনুপাতিক হারে কমিয়ে ‘যৌক্তিক’ করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সে সময় ঠিক হয়েছিল, ফি কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে এলে আগে যেমন ভর্তি ফি বাবদ আয়ের ৪০ শতাংশ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে জমা দিতে হতো, সেটি দিতে হবে না। ইউজিসির ওই সিদ্ধান্তের পর স্বভাবতই আশা করা গিয়েছিল ভর্তি পরীক্ষার ফি কমবে। অথচ গত সোমবার গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষের বৈঠকে আসন্ন শিক্ষাবর্ষে (২০২১-২২) স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তির আবেদন ফি ১ হাজার ৫০০ টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়। গত বছর এই ফি ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা। অর্থাৎ প্রত্যেক আবেদনকারীকে ২৫ শতাংশ বাড়তি ফি গুনতে হবে।

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ও ভর্তি পরীক্ষার ফি বাড়িয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ফি বাড়ায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বছর ফি নির্ধারণ করেছে ১ হাজার টাকা। গতবার ছিল ৬৫০ টাকা। জাহাঙ্গীরনগর আবেদন ফি নির্ধারণ করেছে ৯০০ টাকা। গতবার ছিল ৬০০ টাকা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও ৬৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে আবেদন ফি ৮৫০ টাকা করেছে।

আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ফি না বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। সেই সঙ্গে এই প্রশ্নও তুলতে চাই যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির আবেদন ফি না বাড়িয়ে পারলে, অন্যরা কেন পারল না? ইউজিসি আশ্বাস দিয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষার ফি যৌক্তিক পর্যায়ে আনলে আয়ের ৪০ শতাংশ যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে দেওয়ার কথা আছে, তা দিতে হবে না।

যদিও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসির সেই সুবিধা নিতেও রাজি নয়। নিজেদের পকেট কীভাবে ভারী করা যায়, সেটাই তাদের কাছে অগ্রাধিকার পেয়েছে। এর জন্য যে লাখ লাখ শিক্ষার্থী আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে, সেসব আমলে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদাধিকারীরা। যাঁরা দেশের বিবেক ও মস্তিষ্ক বলে পরিচিত, তাঁদের কাছ থেকে এ রকম আচরণ আশা করা যায় না।

শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করেই ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়েছে। এটি অবশ্যই ভালো সিদ্ধান্ত। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আর্থিক ক্ষতির কথাটি বিবেচনায় না আনার বিষয়টি মেনে নেওয়া যায় না। ভর্তি প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের খরচ হয় সামান্যই। গণমাধ্যমে খবর এসেছে, গত বছর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফি বাবদ আট কোটি টাকা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পকেটে গেছে।

ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তথা শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেশাগত দায়িত্বের অংশ। তাই ভর্তি পরীক্ষাকে কখনোই আয়ের উৎস হিসেবে দেখা উচিত নয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মনে রাখতে হবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয় জনগণের করের অর্থে। ফলে তাঁরা কেন শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষাকে বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে দেখবেন?

আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি ভর্তির আবেদন ফি কমানোর আহ্বান জানাই।