সারা দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের একই দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। গ্রাহক পর্যায়ে ৫ এমবিপিএস (মেগাবাইট পার সেকেন্ড) গতির ইন্টারনেটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ টাকা। এ ছাড়া ১০ এমবিপিএসের মূল্য থাকবে ৭০০ থেকে ৮০০ এবং ২০ এমবিপিএসের মূল্য ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। ঢাকার বাইরের ব্যবহারকারীদের এখন ব্রডব্যান্ড সংযোগের জন্য অনেক ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি অর্থ খরচ করতে হয়। সারা দেশে ইন্টারনেটের এক রেট কার্যকর করা গেলে বর্তমান বৈষম্য দূর হবে। আমরা এ উদ্যোগকে স্বাগত ও সাধুবাদ জানাই। তবে একই সঙ্গে আমরা মনে করি, গুণগত মান বজায় রেখে সারা দেশে এক রেটে ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করার বিষয়টি নিঃসন্দেহে এক বড় চ্যালেঞ্জ এবং এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ওপরই নির্ভর করবে এ উদ্যোগের প্রকৃত সাফল্য।
করোনাকালে দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার ও প্রয়োজনীয়তা অনেক বেড়েছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে ইন্টারনেটের চাহিদা ভবিষ্যতে অব্যাহতভাবে বাড়তেই থাকবে। বিটিআরসির হিসাবে, দেশে গত মার্চ শেষে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সংযোগ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৮ লাখ। এক বছর আগেও সংযোগ সংখ্যা ১৮ লাখ কম ছিল। রাজধানীর বাইরে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপার, আউটসোর্সিং প্রফেশনালদের পাশাপাশি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য এ নতুন উদ্যোগ এক দারুণ খবর।
তবে আমরা মনে করি, সারা দেশে ইন্টারনেটের এক রেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু বাস্তব সমস্যা ও জটিলতা রয়েছে। এখনো দেশের সব ইউনিয়ন ফাইবার অপটিক কেব্লের আওতায় আসেনি। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার অবশ্য চলতি বছরের মধ্যে তা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী (আইএসপি) প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ইউনিয়ন পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা দিতে ব্যান্ডউইথড পরিবহন ব্যয় বেশি। এসব কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা দিতে বেশি খরচ পড়ে যায়।
নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) ও ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ের (আইআইজি) জন্য ব্যান্ডউইথড পরিবহনের ফি কত হবে, তার নির্ধারিত কোনো গাইডলাইন নেই। তারাই আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যান্ডউইথড সরবরাহ করে। আবার গ্রাম, ইউনিয়ন এমনকি উপজেলা পর্যায়ে আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্ধারিত মূল্যে সেবা দিতে কতটুকু বাধ্য করা যাবে, সেটাও এক বড় প্রশ্ন। কারণ, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই স্থানীয় পর্যায়ে আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করে থাকেন। বর্তমানে দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রেই দিনের একটা সময়ে ইন্টারনেটের গতি থাকে না। এসব নিয়ে অভিযোগ করলেও প্রতিকার পাওয়া যায় না। ইন্টারনেট সংযোগ দিতে এককালীন বড় অঙ্কের অর্থ আদায় করা হয়। এরও একটা নীতিমালা দরকার। এসব বিষয় তদারকির জন্য দেশজুড়ে বিটিআরসির যে অবকাঠামো ও লোকবল দরকার, তা নেই।
ইন্টারনেটের সর্বনিম্ন গতি যে ৫ এমবিপিএসের কথা বলা হচ্ছে, সেটা নিশ্চিত করা জরুরি। এত দিনের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, গ্রাহকদের যে গতির কথা বলা হয়, তা দেয় না আইএসপিগুলো। ২০১৮ সালে বিটিআরসি ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন গতি ১০ এমবিপিএস বেঁধে দিয়েছিল। ৫ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট সেবা ব্রডব্যান্ড হিসেবে গণ্য হবে কি না, সেটাও একটা বিষয়।
বাংলাদেশ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দামের দিক দিয়ে বিশ্বে ৫৮তম। নতুন উদ্যোগ সেই র্যাঙ্কিংয়ে হয়তো উন্নতি ঘটাবে। কিন্তু জনগণ এর সুফল তখনই পাবে, যখন দেশজুড়ে নিরবচ্ছিন্ন ও গুণগত মানসম্পন্ন ইন্টারনেট সেবা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা যাবে। এ ক্ষেত্রে যে বাস্তব সমস্যাগুলো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, সেগুলো দূর করার ক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, সেটাই প্রত্যাশিত।