এফবিসিসিআইয়ের উদ্বেগ আমলে নিন

গত শনিবার এফবিসিসিআইসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে সরকারের কাছে বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে আছে এ মুহূর্তে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম না বাড়ানো, মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, বিদ্যুৎ খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ফিরিয়ে আনা।

কেননা গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ালে পণ্যের উৎপাদন ব্যয়ও বেড়ে যাবে। তাঁদের দাবি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বেড়ে চলেছে। এ অবস্থায় গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ালে মূল্যস্ফীতি অসহনীয় অবস্থায় পৌঁছাবে, তাতে জনজীবনের সংকট আরও ঘনীভূত হবে।

ব্যবসায়ী নেতাদের এ উদ্বেগের প্রতিধ্বনি শোনা গেছে একই দিনে প্রথম আলো আয়োজিত ‘অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ ও বাজেট’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকেও। সেখানে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মূল্যস্ফীতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই আগামী বাজেটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। গরিব মানুষের ওপর যাতে মূল্যস্ফীতির চাপ না পড়ে, সে জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধিও বাড়াতে হবে।

করোনা ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, শিপিং ও পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এর প্রভাব পড়ছে আমাদের অর্থনীতিতেও। ব্যবসায়ী নেতাদের উদ্বেগ হলো করোনার অভিঘাত কাটিয়ে না উঠে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ালে শিল্প খাত কঠিন সমস্যায় পড়বে। ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।

জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি যেসব সুপারিশ তুলে ধরেন, তার মধ্যে আছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা আমূল সংস্কার, অনিয়ম, অপচয়, অবৈধ সংযোগসহ যাবতীয় অব্যবস্থা জরুরি নিরসন করা এবং অদক্ষ বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রগুলো বন্ধ করা।

সরকারের নীতিনির্ধারকেরা ‘সবকিছু ঠিক আছে’ বলে যতই আশ্বস্ত করুন না কেন, দেশের অর্থনীতি বহুমাত্রিক সমস্যায় আছে। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি পণ্যের দাম স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। অন্যদিকে রপ্তানি আয়ে কিছুটা স্বস্তি থাকলেও প্রবাসী আয় কমছে। এরই মধ্যে সিলেট অঞ্চলে অকালবন্যাও নতুন করে বিপদের সংকেত দিচ্ছে। মাসখানেক আগে বন্যায় সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হলে কৃষক কাঁচা-পাকা ধান ঘরে তুলতে বাধ্য হয়েছেন।

বিদ্যুৎক্ষেত্রে এই সরকারের অনেক সাফল্য আছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ব্যবসায়ীরাও একমত যে জ্বালানি খাত স্বনির্ভর হওয়ার পরিবর্তে আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছে। বড় বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো চালু হতে বিলম্ব হওয়া এবং রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু রাখার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসায়ী নেতারা।

অনেকে মনে করেন, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের ব্যবসায়ীদের সুবিধা করে দেওয়ার জন্যই বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু করতে বিলম্ব করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়ার অধিকার নিশ্চয়ই জনগণের আছে।

আমরাও মনে করি, এফবিসিসিআইয়ের উদ্বেগ ও দাবি যৌক্তিক। যখন প্রায় প্রতিটি খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে চলেছে, তখন গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে অর্থের অন্য উৎস খুঁজতে হবে। প্রয়োজনে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় আরও কমাতে হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ কিংবা বিলাসপণ্য আমদানির ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধিনিষেধ যথেষ্ট কি না, তা–ও সরকারকে গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।