ঝিনাইদহের ১১ বছর বয়সী শিশু সাব্বির আহম্মেদ। যে বয়সে বই-খাতা হাতে স্কুলে যাওয়ার কথা, সেই বয়সেই সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়েছিল শিশুটিকে। বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ায় রাস্তায় ভ্যান চালিয়ে সংসারের খরচ জোটাতে হতো। পুলিশ উপপরিদর্শক সাগর সিকদারের মানবিক উদ্যোগে শিশুটি আবার স্কুলে যেতে পারছে, পরিবারটির বিকল্প আয়ের পথ তৈরি হচ্ছে।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, গত শনিবার বিকেলে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার দত্তনগর পুলিশ ফাঁড়ির সামনে দিয়ে ভ্যান চালিয়ে যাচ্ছিল সাব্বির। তখন তার ভ্যানে পাঁচ-ছয়জন যাত্রী ছিল। এ দৃশ্য দেখে দত্তনগর ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) সাগর সিকদার ভ্যান থামিয়ে শিশুটির কথা শোনেন। সাব্বিরকে নিয়ে তার অসুস্থ বাবা আবদুল জব্বারের কাছে গিয়ে বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করতে করণীয় ঠিক করেন। সিদ্ধান্ত নেন, তাঁর বাড়িতে একটি দোকান করে দেবেন। সে জন্য পরিবারটিকে ১০ হাজার টাকা দেন। শিশুটিকে বাড়ি থেকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে ভর্তি করে দেন।
পোড়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াকালীন সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল শিশু সাব্বিরকে। সেই স্কুলেই আবার তাকে ভর্তি করা হয়েছে। স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মইনুল ইসলাম জানান, বাচ্চাটি স্কুল ছেড়ে গেলে তাঁরা একাধিকবার খোঁজ নিয়েছেন। তাকে স্কুলে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সংসারের বোঝা কাঁধে থাকায় ফিরতে পারেনি। প্রতিবেশীরা জানান, দরিদ্র হলেও একটা সাজানো সংসার ছিল আবদুল জব্বারের। হঠাৎ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ায় এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল সেই সংসার। পুলিশ কর্মকর্তার উদ্যোগে সংসারটা আবার সচল হওয়ার সুযোগ এল।
মানবিক এ উদ্যোগের অনুপ্রেরণা সম্পর্কে সাগর সিকদার বলেন, পাঁচ থেকে ছয়জন যাত্রী নিয়ে শিশুটিকে ভ্যান চালাতে দেখে তাঁর খারাপ লেগেছিল। তাই দাঁড় করে পরিবারের খোঁজ নেন। সবকিছু জেনে বাবাকে একটি দোকান আর ছেলেটিকে স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করেন।
অসুখ-বিসুখ কিংবা দুর্ঘটনা এ রকম নানা কারণে আমাদের সমাজে অসংখ্য পরিবার হঠাৎ করেই অর্থনৈতিক দুরবস্থায় পড়ে। দেখা যায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি উপার্জন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। এ পরিবারগুলোর অসহায়ত্বের সীমা থাকে না। এতে পড়াশোনা ছেড়ে শিশুরা বাধ্য হয় সংসারের হাল ধরতে। সমাজের সচ্ছল ব্যক্তিরা পাশে এসে দাঁড়ালে পরিবারগুলো নতুন করে স্বপ্ন বুনতে পারে। এসআই সাগর সিকদার সেই কাজটিই করেছেন। তাঁর এ মানবিক উদ্যোগকে অভিবাদন।