এসএসসি–এইচএসসি পরীক্ষা

সম্পাদকীয়

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গত বৃহস্পতিবার ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে একটি রূপরেখা দিয়েছেন। এতে বলা হয়, চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষা সব বিষয়ে না নিয়ে কেবল গ্রুপভিত্তিক নৈর্বাচনিক তিন বিষয়ে নেওয়া হবে। এ বিষয়গুলোর সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি শেষ করা হবে অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে। এর মধ্যে এসএসসিতে মোট ২৪টি ও এইচএসসিতে ৩০টি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে শিক্ষার্থীদের।

বিলম্বে হলেও শিক্ষামন্ত্রীর এ ঘোষণা লাখ লাখ এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীর উদ্বেগ কিছুটা হলেও কমাবে। এত দিন তারা অনিশ্চয়তায় ছিল পরীক্ষা আদৌ হবে কি না। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এইচএসসির অ্যাসাইনমেন্ট ২৬ জুলাই শুরু হবে। শিক্ষার্থীদের ১৫ সপ্তাহে ৩০টি অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে। প্রতি পত্রে পাঁচটি অ্যাসাইনমেন্ট করতে হবে। সপ্তাহে দিতে হবে দুটি অ্যাসাইনমেন্ট। এসএসসিতে ২৪ ও এইচএসসিতে ৩০টি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেবে শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষামন্ত্রী কেবল গ্রুপভিত্তিক তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়ার যে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন, তার সঙ্গে একমত হওয়া কঠিন। কেননা, এসএসসি ও এইচএসসি উভয় শিক্ষার্থীদের জন্য আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি ও গণিত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা গত কয়েক বছরের পরীক্ষার ফলাফলের দিকে তাকালে দেখব, ইংরেজি ও গণিতে অকৃতকার্য হওয়ার হার অপেক্ষাকৃত বেশি। এ ছাড়া এ দুটি বিষয়ে ভালো করতে না পারলে উচ্চতর শিক্ষা চালিয়ে নেওয়া কঠিন। তাই এ দুটি বিষয় জেএসসি ও এসএসসির (এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য) ফলের ভিত্তিতে ম্যাপিং করা সমীচীন হবে না। শিক্ষাবিদেরাও বলেছেন, বাংলা ও ইংরেজির দুটো বিষয়কে প্রয়োজনে একটি করে এবং গণিতে পরীক্ষা হওয়া বাঞ্ছনীয়।

আমরা মনে করি, মূল্যায়নের জন্য বাংলা, ইংরেজি ও গণিতকে পুরোপুরি বাদ দেওয়া ঠিক হবে না। আশা করা যায়, দু–তিন মাসের মধ্যে সংক্রমণ কমে যাবে এবং সরকার মোটামুটি সময়ও পাবে। পরীক্ষা ও অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হচ্ছে পরীক্ষার্থীরা কী শিখল, তার মূল্যায়নের জন্য। সে ক্ষেত্রে আবশ্যিক বিষয় বাদ দেওয়া কোনোভাবে ঠিক হবে না।

বর্তমানে দেশে সংক্রমণের হার বেশি। এ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি কেউ করছেন না। কিন্তু যখন অপেক্ষাকৃত কম ছিল, তখন কেন সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিল না, সেই প্রশ্ন না উঠে পারে না।

সম্প্রতি ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর ও ইউনেসকোর মহাপরিচালক অড্রে অ্যাজুল যৌথ বিবৃতিতে লাখ লাখ শিশুর পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে জানিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, সংক্রমণ শূন্যে চলে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাবে না। এ বিবৃতি সব সদস্যদেশের জন্য হলেও আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার প্রয়োজন আছে। কেননা যে ১৯টি দেশে করোনার কারণে দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে, সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশও আছে। ইউনেসকো ও ইউনিসেফের বিবৃতি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, সংক্রমণ কমলে প্রস্তুতি নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। বর্তমানে দেশে সংক্রমণের হার বেশি। এ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি কেউ করছেন না। কিন্তু যখন অপেক্ষাকৃত কম ছিল, তখন কেন সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিল না, সেই প্রশ্ন না উঠে পারে না। আর প্রশ্নটি কেবল স্কুলের ছোট শিশুদের নয়, কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া লাখ লাখ শিক্ষার্থীও দেড় বছর ধরে গৃহবন্দী। তাঁদের এ গৃহবন্দিত্ব দূর করতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন।