পবিত্র ঈদুল আজহা যত এগিয়ে আসছে, করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণের হারও তত বেড়ে চলেছে। গতকাল সোমবার ২৪ ঘণ্টার হিসাবে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৬৪ জন, যা এ পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ। আট দিনে এক হাজার মৃত্যুর রেকর্ডও তৈরি হয়েছে এ সময়ে। সংক্রমণ রোধে সরকার প্রথমে সাত দিনের কঠোর লকডাউন দিয়েছিল সারা দেশে, পরে আরও সাত দিন বাড়ানো হয়।
ঈদুল আজহা সামনে রেখে কোরবানির হাট নিয়ে যে রকম তোড়জোড় চলছে, তাতে লকডাউন বা সরকারের বিধিনিষেধ কতটা কার্যকর হবে, সে বিষয়ে ঘোরতর সন্দেহ আছে। এ বছর ঈদুল আজহায় ১ কোটি ১০ লাখ পশু কোরবানি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। গত বছর ৯৫ লাখ পশু কোরবানি হয়েছিল। এ বিপুলসংখ্যক পশুর কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে যে লোকসমাগম হবে, তাতে সংক্রমণ আরও ভয়ংকর রূপ নিতে পারে।
এ অবস্থায় করণীয় কী? যেকোনো মূল্যে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে হবে। আবার ধর্মীয় বিধানও অগ্রাহ্য করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে অনলাইন পশুর হাটের আয়োজনই উত্তম বিকল্প হতে পারে। গত বছর অনলাইনে কোরবানির পশু কেনাবেচা হলেও সংখ্যা ছিল তুলনামূলক কম। প্রায় ১ কোটি পশুর মধ্যে ২৬ হাজার ৯০০টি বিক্রি হয়েছে অনলাইনে। এ প্রেক্ষাপটে গত রোববার এক ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে ডিজিটাল হাটের উদ্বোধন করা হয়, যাতে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীনে ডিজিটাল হাটের আয়োজন করেছে ই–ক্যাব ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন। এর বাইরে গত শনিবার পর্যন্ত সারা দেশে ৭০৭টি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে গবাদিপশুর কেনাবেচা শুরু হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডিজিটাল হাটের পক্ষে প্রচার চালানো হচ্ছে।
ডিজিটাল হাট সম্পর্কে মানুষের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও সংশয় আছে। অনেকে মনে করেন, ডিজিটাল হাটে কোরবানির পশু কিনলে তিনি ঠকে যাবেন। এ ক্ষেত্রে পশুর লাইভ ওয়েট, রং, দাঁত ইত্যাদি দেখে কেনার এবং ছবির পাশাপাশি খামার ও গরুর ভিডিও দেখানো হলে ক্রেতাদের আস্থা ফিরে আসবে আশা করি। কোনো কোনো প্ল্যাটফর্ম পশুর ছবিসহ নানা তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছেড়েছে। যথাযথ প্রচার ও তদারকি থাকলে ক্রেতারা অনলাইনে কোরবানির পশু কিনতে উৎসাহিত হবেন।
দারাজ ২০১৭ সাল থেকে ‘গরুর হাট’ নামক ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে কোরবানির পশু বিক্রি করে আসছে। তারা গরুর লাইভ ওয়েট, রং, দাঁত ইত্যাদি দেখে কেনার এবং ছবির পাশাপাশি খামার ও গরুর ভিডিও দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে। ২০২০ সাল থেকে ‘অনলাইন কোরবানির হাট’ শিরোনামে কোরবানির পশু বিক্রি করে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অথবা ডটকম এবার অনেকগুলো প্ল্যাটফর্ম উদ্যোগ নিয়েছে। সে ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় প্রশাসনের উচিত হবে ডিজিটাল হাটকে উৎসাহিত করা।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ২৩টি অস্থায়ী ও একটি স্থায়ী হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে পত্রিকায় খবর এসেছে। কিন্তু আমরা মনে করি, এ মহামারিকালে সরাসরি হাট না বসিয়ে ডিজিটাল হাটকে উৎসাহিত করা উচিত। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যাতে করোনা সংক্রমণ আরও বেড়ে যায়।