গ্রামের খালটি সবার, গ্রামটিও সবার। কিন্তু তাতে বাঁধ দিয়ে সেই ‘সবাইকে’ ভাসিয়ে দিয়েছেন কতিপয় ‘ব্যক্তি’। খালের জায়গায় জায়গায় বাঁধ দেওয়ায় পানিনিষ্কাশন হচ্ছে না বলে গ্রামটির অনেক বাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে। বাঁধ দেওয়া হয়েছে মাছ চাষের নিমিত্তে, কিন্তু মানুষেরা হয়েছেন ঘরছাড়া। প্রভাবশালীদের স্বার্থের কাছে এভাবে সাধারণের জীবন ভেসে যাওয়া—এর নামই কি স্বেচ্ছাচার নয়?
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার রশিদপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে দুটি খাল—চিরনখালী ও কাটাখালী। আট বছর আগে মাছ ধরার জন্য খাল দুটিতে বাঁধ দেওয়া শুরু হয়। প্রভাবশালীরা যখন ‘মৎস্য মারিব খাইব সুখে’ মেজাজে মাছের ব্যবসা চালাচ্ছেন, তখন ভেসে যাচ্ছে মানুষের ঘরবাড়ি। বন্যার সময় এর নাম হয় বন্যা, কিন্তু কার্যত এটা মানুষের সৃষ্ট জলাবদ্ধতা।
বাঁধের কারণে খালের পানি আটকে তৈরি হওয়া এই জলাবদ্ধতা ১৭ দিন ধরে চলছে রশিদপুর গ্রামে। প্রতিবছরই এই ভোগান্তি পোহাতে হয় তাঁদের। প্রথম আলোর রোববারের সচিত্র সংবাদে দেখা যায়, মানুষের ডুবে যাওয়া সংসার, বোঝা যায় নিজের বাড়িঘরে থাকতে না–পারা মানুষের হাহাকার। অথচ স্থানীয় চেয়ারম্যান বললেন, তিনি বিষয়টি সম্প্রতি জেনেছেন। অন্যদিকে গ্রামবাসী সকালবেলা পানি ডিঙিয়ে উঁচু জমিতে প্রতিবেশীর ঘরবাড়িতে ঘুরে ঘুরে দিন কাটান। রাতে ফিরে খাটের ওপর চুলা বসিয়ে রান্নার কাজ সারেন। জলাবদ্ধতার পানিতে চর্মরোগের শিকারও হচ্ছেন অনেকে। এত মানুষের কষ্ট বনাম কতিপয় মাছ ব্যবসায়ীর স্বার্থ—কোন দিকে যাবে প্রশাসন?
যে সমস্যা আট বছর ধরে মানুষকে ভোগাচ্ছে, তার সমাধানের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার ও জেলা–উপজেলা প্রশাসনের। তারা যে ওই প্রভাবশালীদের পক্ষে, তা তাদের আট বছরের নিষ্ক্রিয়তাই বুঝিয়ে দেয়।
শুধু কি ময়মনসিংহের একটি গ্রাম? সারা দেশেই কোথাও বিদ্যালয়ের জমিতে পুকুর কেটে, কোথাও পার্ক দখল করে, কোথাও নদী–খাল–বিলে বাঁধ দিয়ে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগত স্বার্থ চরিতার্থ করার সংবাদ নিয়মিতভাবেই সংবাদমাধ্যমে আসে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এলাকার রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের যোগাযোগ এবং প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়া দেখা যায়। ক্ষমতার এই জোটের কাছে সাধারণ মানুষ নিতান্তই অসহায় বোধ করেন। অবৈধ ও আইনবহির্ভূত এই সব বাঁধ কি সরকারি ক্ষমতার চেয়ে মজবুত? এসবের দ্বারা লাভবানেরা কি আইনের ঊর্ধ্বে?
আমরা আশা করব, আইনের হাত এসব অন্যায়ের বাঁধ দ্রুতই ভেঙে দেবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো না হলে আছে কেন?