কৃষিনির্ভর উৎপাদনে পাখি ও কীটপতঙ্গের উপস্থিতি অপরিহার্য। ফসলের একধরনের নিরাপত্তাও দিয়ে থাকে তারা। ক্ষতিকর পোকামাকড়, ব্যাকটেরিয়া ও রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়। ফলে সেই ফসলে তাদের হিস্যা থাকাও স্বাভাবিক। আর ফসল পাকলে খাদ্যের সন্ধানে পাখি তো আসবেই। এতে খেত ও কৃষকের ক্ষতি যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। তাই বলে পাখি তাড়ানোর জন্য খেতের ওপর কারেন্ট জাল দেওয়া হবে, বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অথচ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে এমনটিই দেখা গেছে। সেখানে সবজিখেত রক্ষায় কারেন্ট জাল ব্যবহার করছেন কৃষকেরা। ওই কারেন্ট জালে আটকা পড়ছে পাখি। এতে অনেক পাখি মারাও যাচ্ছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, উপজেলার উজানচর, দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের চরাঞ্চলে বেগুন, টমেটো, কপিসহ নানা ধরনের সবজি চাষ করা হয়েছে। বেশির ভাগ সবজিখেতের চারপাশ ও ওপর দিয়ে কারেন্ট জালে ঘেরা। টিয়া, দোয়েল, শালিক, চড়ুইসহ নানা ধরনের পাখি খেতে নেমে সবজি খায় বলে কারেন্ট জালের এই ঘেরা দিয়েছেন কৃষকেরা। এই জালে আটকে পড়ে অনেক পাখি মারা পড়ছে। পাখির মৃত্যুর বিষয়টি কৃষকেরা স্বীকারও করছেন। উজানচর ইউনিয়নের এক কৃষক বলছেন, প্রায় দুই বিঘা জমিতে বেগুন রোপণ করেছেন, ফলনও হয়েছে বেশ। বেগুনখেতের চারদিক ও ওপর দিয়ে কারেন্ট জাল দিয়ে ঘিরে রেখেছেন তিনি। কারেন্ট জালে আটকা পড়ে অনেক সময় পাখি মারা পড়ছে। এর পরও জেনেশুনে কৃষকেরা কারেন্ট জাল ব্যবহার করছেন।
ফসলের খেতে পাখির উপদ্রব নতুন কিছু নয়। আদিকাল থেকেই কৃষকদের কাছে এর নানা উপায় জানা আছে। কারেন্ট জাল পেতে পাখি হত্যার বিষয়টি আগে তেমন দেখা যেত না। দিন দিন সেটি বাড়ছে। এতে শুধু পাখিই মরছে না, ক্ষতি হচ্ছে জীববৈচিত্র্যেরও। কৃষিতে পাখিদের অংশগ্রহণের উপকারিতা থেকে বঞ্চিত হবেন কৃষকেরাই। এ বিষয়ে তাঁদের সচেতন করে তুলতে হবে। পাখি তাড়ানোর পরিবেশবান্ধব নানা উপায় গ্রহণ করতে উৎসাহিত করা হোক। উপজেলা ও ইউনিয়ন কৃষি কর্মকর্তাদের বক্তব্য, কারেন্ট জাল ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ বিষয়ে কৃষকদের ডেকে সতর্ক করা হলেও এর থেকে তাঁরা বিরত থাকছেন না। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া দমন করা সম্ভব নয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন, সবজি রক্ষা করতে গিয়ে পাখি হত্যা করা যাবে না। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এখন তিনি কী পদক্ষেপ নেন, সেটিই দেখার অপেক্ষা।