গাড়ি উঠলেই যে সেতু দোলে

সম্পাদকীয়

বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কে ঝালকাঠি বাসন্ডা বেইলি সেতুটি পাঁচ বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। বর্তমানে সেটির অবস্থা খুবই নাজুক। ভারী যানবাহন উঠলেই ভয়ানকভাবে সেতুটি দুলতে থাকে। যেকোনো মুহূর্তে সেটি ভেঙে পড়তে পারে। সে রকম হলে বড় ক্ষয়ক্ষতির যেমন আশঙ্কা আছে, আবার সড়কপথে ঝালকাঠির সঙ্গে পিরোজপুর, বাগেরহাট, খুলনা ও যশোরের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৮৯ সালে ঝালকাঠি সদর উপজেলার বাসন্ডা নদীর ওপর বেইলি সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৯৪ ফুট ও প্রস্থ ২৫ ফুট। এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ ভারী যানবাহন চলাচল করে। কিছুদিন পরপর সেতুর স্টিলের পাটাতন ফেটে যায় এবং নাটবল্টু খুলে যায়। এটি বারবার মেরামত করা হলেও কয়েক দিনের মধ্যে আবার যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ কারণে ২০১৬ সালে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করা হয়। গত পাঁচ বছরে এ সেতু সংস্কারে সওজের এক কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে, জরাজীর্ণ সেতুটির একটা অংশ বন্ধ করে স্টিলের পাটাতনে ঝালাই দিচ্ছেন সওজের কর্মীরা। এ সেতু দিয়ে চলাচলকারী খুলনা-বরিশাল রুটের যাত্রীবাহী গাড়ির চালক মোতালেব হোসেনের ভাষ্যে জানা যায়, দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকলেও প্রতিদিন যাত্রীদের নিয়ে তাঁরা সেতু পার হচ্ছেন। সওজের ঝালকাঠি কার্যালয় জানিয়েছে, স্টিলের সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে সেখানে একটি কংক্রিটের সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য ঢাকায় উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাঠানো হয়েছে। সেটি অনুমোদিত হলে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে।

বাসন্ডা বেইলি সেতুটি ঝালকাঠির সঙ্গে কয়েকটি জেলার যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু ভেঙে দুর্ঘটনার খবর প্রায়ই পাওয়া যায়। সেসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও সম্পদহানিও হয়। আবার যোগাযোগের ক্ষেত্রেও বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। বাসন্ডা সেতুটি পাঁচ বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার পরও এত দিনে সেখানে নতুন ব্রিজ নির্মাণ না করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। আবার প্রতিবছর মেরামতের পেছনে সওজ যে অপচয় করছে, তাতে সরকারের অর্থ পানিতেই পড়ছে। এখন এই সেতু ভেঙে যদি কোনো বিপর্যয় ঘটে, তখন এর দায় নেবে কে? আমরা চাই বড় কোনো দুর্ঘটনার আগে বাসন্ডা নদীর ওপর সেতু নতুন করে নির্মাণ করা হোক।