চারপাশে চারটি দেয়াল আর মাথার ওপর ছাদ—এই পরম আশ্রয়ের নাম ঘর। ঘর নামক ইট-কাঠের আশ্রয় যে কত আরাধ্য বস্তু, তা শুধু গৃহহীনেরাই জানেন।
যাঁরা গৃহহীন তাঁরা অস্থায়ী আস্তানায় মাথা গুঁজে থাকেন। আস্তানার সঙ্গে ঘরের পার্থক্য অনেক। প্রধান পার্থক্য স্থায়িত্বে। আস্তানা সাময়িক। ঘর দীর্ঘকালের সুখ–দুঃখের সঙ্গী। সেখানে একটি জীবনচক্র থাকে। সেখানে ‘রাতের সোহাগ ভোরের লজ্জা দুপুরবেলার চড় চাপাটি’র একটি সংসার থাকে।
অতি আনন্দের কথা, মাগুরা সদর উপজেলার মাধবপুর গুচ্ছগ্রামে ১৫টি ভূমিহীন পরিবারকে সেই ঘরের ‘আস্বাদ’ দিয়েছে সরকার। ভিটেমাটিহীন এসব পরিবারকে এত দিন ‘ভেসে ভেসে’ বেড়াতে হয়েছে। এখন তাঁরা আশ্রয় পেয়েছেন। সে আশ্রয় সম্মানের, মানবিকতারও।
সংবাদপত্রের ভাষ্যমতে, এখানে ঘর পাওয়া রিনা খাতুনের প্রতিটি সকাল এখন অন্য রকম। কেননা, এখন তিনি রাতে দুই সন্তান নিয়ে ঘুমাচ্ছেন নিজের ঘরে। ভিটেমাটিহীন বিধবা এই নারীর গত কয়েক বছর কেটেছে মানুষের বাড়ি বাড়ি। অন্যান্য গুচ্ছগ্রামে যেসব ভূমিহীনের ঠাঁই হয়েছে, তাঁদের চেয়ে নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছেন রিনা। কারণ, এই গুচ্ছগ্রামের বাড়ির নকশা থেকে শুরু করে অনেক কিছুতেই আনা হয়েছে পরিবর্তন। কাগজে-কলমে গুচ্ছগ্রাম নাম হলেও স্থানীয়ভাবে এটি পরিচিতি পেয়েছে ‘পিংক ভিলেজ’ বা ‘গোলাপি গ্রাম’ নামে। গোলাপি টিনের আধা পাকা বাড়ি, সোলার লাইট, পরিবেশবান্ধব চুলা, ঘরের সঙ্গে পাকা টয়লেট, শিশুদের জন্য খেলার জায়গা—সবই আছে এখানে।
প্রকল্পের বরাদ্দের বাইরেও কিছু সুবিধা পেয়েছেন এই গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা। মূল রাস্তার সঙ্গে যুক্ত করতে ৫ ফুট প্রস্থ ও ৩৭৫ ফুট দৈর্ঘ্যের ইটের সলিং রাস্তা করা হয়েছে পরিষদের উন্নয়ন তহবিল থেকে। মোট ৪৮ শতক জমির ওপর ১৫টি ঘর নির্মাণের পাশাপাশি ৬ শতক রাখা হয়েছে খেলার মাঠ হিসেবে।
গুচ্ছগ্রামে গোলাপি রং ব্যবহারের যে কারণ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, তা প্রশংসা করার মতো। ইউএনও আবু সুফিয়ান বলেছেন, এই রংটা ব্যবহার করা হয়েছে নারীর ক্ষমতায়নকে সামনে আনার জন্য। এই রং নারীর নিজের। প্রতিটি ঘরের মালিক করা হয়েছে পরিবারের নারী সদস্যকে। তাঁরা মনে করেছেন, যখন একটি বাড়ির মালিক হবেন মা বা নারী, তখন ওই বাড়ির পুরুষ নারীর ওপর অন্যায়ভাবে কর্তৃত্ব খাটাতে বা সহিংসতা দেখাতে পারবেন না। এই ভাবনার অন্তঃস্থিত মহত্ত্ব তৃণমূল পর্যায়ের নারীকে শক্তি জোগাতে সহায়তা করবে। তবে এসব ঘরের মালিকানা হস্তান্তর করেই কর্তব্য শেষ ঠিক হবে না। নিয়মিত ভিত্তিতে বাসিন্দাদের খোঁজখবর নেওয়া এবং এসব ঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দিকে খেয়াল করার মধ্যে প্রকল্পের মোক্ষ পূর্ণতা পাবে। দেশের অন্যান্য স্থানের গুচ্ছগ্রামগুলোতেও এই মডেল অনুসৃত হতে পারে।