ইন্টারনেটের সার্চ ইঞ্জিন গুগলে ‘অপ্রয়োজনীয় সেতু’ শব্দবন্ধ লিখে অনুসন্ধান করলে ‘জন্ম থেকেই পরিত্যক্ত’ শ্রেণির অসংখ্য সেতুর খবর মিলবে। এসব সেতু নির্মাণে যত টাকা ব্যয় হওয়ার তথ্য পাওয়া যাবে, তা যে কাউকে ‘সরকারকা মাল দরিয়া মে ঢাল’ কথাটি মনে করিয়ে দেবে। বিস্ময়কর বাস্তবতা হলো, একদিকে জনগণ এসব অপ্রয়োজনীয় অবকাঠামোর কানাকড়ি ফল না পেলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও প্রকল্প কর্মকর্তাদের প্রভূত উন্নতি হয়ে থাকে; অন্যদিকে বহু জায়গায় সড়ক কিংবা সেতুর অভাবে বছরের পর বছর সাধারণ মানুষ অশেষ ক্লেশ স্বীকার করে। সরকারি সহায়তার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে একপর্যায়ে কোথাও কোথাও স্থানীয় মানুষ নিজেরাই অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে নামে।
গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলায় এর সর্বশেষ নজির দেখা গেল। সেখানে একটি সেতু বানানোর জন্য এলাকাবাসী দীর্ঘদিন জনপ্রতিনিধিদের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো সহায়তা না পেয়ে তাঁরা ‘আমার কাঁধেই নিলাম তুলে আমার যত বোঝা’ নীতি অনুসরণ করেছেন। তাঁরা চাঁদা তুলে বাঁশ ও কাঠের সাঁকো নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, এক পারে দামোদরপুর ইউনিয়ন। অন্য পারে রসুলপুর ইউনিয়ন। মাঝে ঘাঘট নদ। ইউনিয়ন দুটির মধ্যে যোগাযোগের ভরসা একটি ছোট নৌকা। স্থানীয় লোকজন দীর্ঘদিন ধরে সেখানে সেতু নির্মাণের দাবি জানালেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। বাধ্য হয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে নদের ওপর বাঁশের সাঁকো নির্মাণের কাজ শুরু করেন এলাকাবাসী। নদে এক মাস ধরে সাঁকো তৈরির কাজ চলছে। কেউ বাঁশ, কেউ গাছ, কাঠ, রশি, নগদ টাকা দিচ্ছেন। যাঁরা আর্থিক সহায়তা দিতে পারছেন না, তাঁরা স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন। বর্তমানে পাটাতন তৈরির কাজ চলছে। এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় দুই লাখ টাকা। কাজ শেষ করতে আরও তিন লাখ টাকা প্রয়োজন। সে টাকা জোগাড় না হওয়ায় কাজও এগোচ্ছে না।
বাংলাদেশের অগণিত জায়গায় এ অবস্থা চলছে। সাদুল্যাপুরের এ ঘটনা সেগুলোরই একটি প্রতিনিধিত্বশীল ছবি। এ ছবির মধ্য দিয়েই প্রতীয়মান হয়, সেতু নির্মাণে কোথায় কতটুকু অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন, সে বিষয়ে এখনো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভাবনা উদ্বেগজনকভাবে পিছিয়ে রয়েছে। এ বাস্তবতা আমলে নিয়ে অবিলম্বে সাদুল্যাপুরের ঘাঘট নদে একটি সেতু বিনির্মাণ জরুরি। একই সঙ্গে এ ধরনের জায়গাগুলো চিহ্নিত করে সেসব জায়গাকে সেতু নির্মাণে অগ্রাধিকার দেওয়াও কাম্য।