‘চায়না দুয়ারি’র বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

নদীনালা, খাল–বিলের সুস্বাদু মাছে ঈর্ষণীয় খাদ্য-রসময় জীবন এখন অনেকটাই ম্লান ‘মাছে–ভাতে বাঙালি’র। যদিও বিলুপ্ত অনেক দেশি মাছ বৈজ্ঞানিকভাবে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে কোনো দেশি মাছ থাকবে না? পরিবেশ ধ্বংসের কারণে বাঙালির জিব থেকে বিদায় নিয়েছে দেশি মাছের অপূর্ব স্বাদ। ছিটেফোঁটা যা–ও আছে, সেগুলো কি এখন বিদায় নেবে ‘চায়না দুয়ারি’ জালের কারণে? অনেকে এখনো নতুন এ জালের কথা না শুনলেও সারা দেশে জেলেদের মধ্যে বিস্তার ঘটেছে এর। নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের চেয়েও ভয়ংকর এ জালের কারণে শুধু মাছই নয়, হুমকির মুখে জলজ প্রাণবৈচিত্র্য।

প্রথম আলো ও বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন জানাচ্ছে, পদ্মা নদীর তীরবর্তী জেলা-উপজেলায় প্রথম চায়না দুয়ারি জালের ব্যবহার শুরু হয়। মূলত দেশেই তৈরি হয় এ জাল। ম্যাজিক জাল এবং ঢলুক জাল নামেও ডাকা হয় এটিকে। এই জালের বুননে গিঁটের দূরত্ব খুব কম, ফলে এতে মাছ একবার ঢুকলে আর বের হতে পারে না। এটি নদীর একেবারে তলদেশ পর্যন্ত যায় এবং তলদেশের মাটির সঙ্গে মিশে থাকে। ফলে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে সব মাছ ধরতে সক্ষম।

আইনানুসারে চায়না দুয়ারি নিষিদ্ধ হলেও নিষিদ্ধ জালের তালিকায় এর উল্লেখ নেই। আইনের সেই ফাঁকের সুযোগটিই অনেক জেলে নিচ্ছেন। নৌ পুলিশ ও মৎস্য অফিস ঝামেলা করলে তাদেরও ‘ম্যানেজ’ করছেন জেলেরা। জেলেদের ভাষ্য, অল্প পুঁজিতে চায়না দুয়ারিতে অনেক মাছ পাওয়া যায়। তাই এটির প্রতি ঝুঁকছেন সবাই।

মৎস্য গবেষকেরা বলেন, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত দুই ধরনের ক্ষতি ডেকে আনছে চায়না দুয়ারি। এ জালে মাছের পোনা, ডিম পর্যন্ত উঠে আসে। সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে যত মাছ ধরা পড়ে, তার সবই বাজারে চাহিদা থাকা মাছ নয়। সেগুলো জেলেরা ফেলে দেওয়ায় বেশির ভাগ সময় আর বাঁচে না। ফলে মাছগুলো আর বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। এর মধ্যে হয়তো অনেক মাছ আছে, যা বিপন্ন প্রজাতির। অনেক জলজ প্রাণীর পরিণতিও একই হয়।

মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, উন্মুক্ত জলাশয়ে জন্মানো প্রতিটি মাছকে একবার ডিম ছাড়া ও বাচ্চা ফোটানোর সুযোগ দিতে হবে। তার আগে মাছের পোনা ধরা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। চায়না দুয়ারি দিয়ে সেটিই ঘটছে। জেলেদের এ ব্যাপারে সতর্ক ও সচেতন করা হোক। নিয়মিত অভিযান চালিয়ে চায়না দুয়ারি জাল ধ্বংস করা হোক। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না।