জনবল ছাড়াই হাসপাতাল উদ্বোধন

সম্পাদকীয়

করোনা পরিস্থিতিতে রোগী নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে দৌড়াতে দৌড়াতে মানুষের নাভিশ্বাস। রোগীর চাপে শয্যা খালি নেই, আইসিইউ কিংবা অক্সিজেন–সংকট, নেই পর্যাপ্ত জনবল—ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের জনবল ছাড়াই চারতলা ভবনের একটি হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়েছে। সব চিকিৎসা সরঞ্জামও আসেনি। এমনকি প্রশাসনিক অনুমোদনও মেলেনি। নাটোরের নবগঠিত নলডাঙ্গা উপজেলায় এ ঘটনা ঘটেছে। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে কয়েক শ মানুষের সমাগম নিয়ে স্থানীয় সাংসদ হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন। এখন এ হাসপাতাল কীভাবে চলবে, সেটি নিয়ে জগাখিচুড়ি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত মঙ্গলবার ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় সাংসদ শফিকুল ইসলাম ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন। সেখানে জেলা প্রশাসক, নাটোর পৌরসভার মেয়র, নলডাঙ্গার ইউএনও, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ স্থানীয় দলীয় নেতাদের নিয়ে কোনো সামাজিক দূরত্ব না মেনেই দুই ঘণ্টা ধরে সভাও করেন সাংসদ। প্রায় ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে আড়াই বছর আগে হাসপাতালটির নির্মাণকাজ শুরু হয়, শেষ হয় গত মে মাসে। এরপর প্রশাসনিক অনুমোদন চেয়ে দরখাস্ত করা হয়। হাসপাতাল পরিচালনার জন্য ১৫ জন চিকিৎসকসহ ৮৪ জনের নিয়োগ চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দেন। কিন্তু গত দুই মাসে প্রশাসনিক অনুমোদন ও জনবল কোনোটাই মেলেনি। এরপরও জোর করে হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন সাংসদ। স্থানীয় ব্যক্তিদের ভাষ্য, সস্তা জনপ্রিয়তা লাভে এমন কাণ্ড করেছেন তিনি। শুধু তা–ই নয়, করোনার ঊর্ধ্বগতির মধ্যেও বিপুল কর্মী বাহিনী নিয়ে নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচি করে যাচ্ছেন। প্রশাসনের কোনো বাধাই তিনি মানছেন না।

হাসপাতালটির প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কোনো জনবল ছাড়াই হাসপাতালটি যখন উদ্বোধন হয়ে গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রগুলোতে যেসব চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া আছে, তাঁদের এই হাসপাতালে বসিয়ে আপাতত বহির্বিভাগ চালু করা হবে। প্রথম আলোর প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মূলত একটি ভবন উদ্বোধন করা হয়েছে, এখানে হাসপাতাল বলতে কিছুই নেই। এখন করোনা পরিস্থিতিতে দূরদূরান্ত থেকে মুমূর্ষু রোগীরা এখানে এসে ভ্রান্তিতে পড়বে। এ ছাড়া উপকেন্দ্রগুলো পড়েছে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় বিল অঞ্চলে। সেখানকার চিকিৎসকদের এ হাসপাতালে নিয়ে এলে সেসব এলাকার বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। চিকিৎসার জন্য উপজেলায় আসতে তাদের ভোগান্তি বেড়ে যাবে।

করোনা পরিস্থিতিতে জনপ্রতিনিধিরা যেখানে জনগণের পাশে না দাঁড়ানো নিয়ে নানা সমালোচনা হচ্ছে, সেখানে এমন কর্মকাণ্ড রীতিমতো তামাশাই বলা চলে। যদিও সাংসদ বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়েছে। দ্রুত সব সমস্যার সমাধান হবে। আমরাও চাই তিনিসহ স্থানীয় প্রশাসন মিলে দ্রুত হাসপাতালটির পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নেবেন।