মুন্সিগঞ্জ জেলার পাশ দিয়েই বয়ে গেছে ধলেশ্বরী নদী। নদীমুখো বাড়ির কদরই আলাদা, কিন্তু হাটলক্ষ্মীগঞ্জ থেকে ফিরিঙ্গিবাজার পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার জায়গার বাসিন্দাদের কাছে এ নদীই এখন হয়ে উঠেছে অভিশাপ। অভিশাপের মূলে আছে বালু। নদীপথে দূরদূরান্ত থেকে বালু এনে এখানে নামানো হয়। এ বালুকে ঘিরে আস্তে আস্তে এখানে গড়ে ওঠে ব্যবসা। ৩০ থেকে ৩৫টি গদি বসিয়ে চলছে এ ব্যবসা। আর এখনো যেহেতু নির্মাণসামগ্রীর প্রধানতম উপাদান বালু, তাই সারা বছরই প্রায় রমরমা থাকে এ ব্যবসা। জায়গাটায় সব সময়ই এখন তাই ধুলাবালু ওড়ে। সামান্য বাতাস ছুটলেই বালুতে অন্ধকার হয়ে যায় চারপাশ। পিচ রাস্তাটা ঢাকা পড়ে হয়ে গেছে বালুর রাস্তা। সামান্য বাতাস ছুটলেই ঘরের ভেতর বালু ঢুকে পড়ে। ঘরের আসবাবে বালু। খাবারে বালু। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে কাশি দিলে পেট থেকেও বের হয়ে আসে বালু। মনে হয় স্বপ্নেও বালু দেখেন এলাকাবাসী। সব মিলিয়ে তাঁদের জীবনটাই হয়ে গেছে বালুময়।
সন্দেহ নেই বালুর ব্যবসা নদীর পারেই করতে হবে। তবে জনবসতি কম আছে, এমন কোনো জায়গাতেও তো ব্যবসাটা সরিয়ে নেওয়া যায়। যদি আশপাশে তেমন জায়গা না থাকে এবং জনবসতিতেই যদি ব্যবসা করতে হয়, তাহলেও তো ব্যবসা করার কিছু নিয়মকানুন আছে। রাস্তা নিশ্চয় বালু রাখার জায়গা নয়। জনগণের চলাচলের জায়গায় স্তূপ করে ব্যবসার পণ্য রেখে দেওয়াটা মনে হয় বাংলাদেশের সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে চাইলেই আপনি ফুটপাত বন্ধ করে রাখতে পারেন নির্মাণসামগ্রী, গড়ে তুলতে পারেন ট্রাক বা বাসস্ট্যান্ড, ব্যক্তিগত গ্যারেজ, ফুটপাতে গড়ে তুলতে পারেন দোকান। রাস্তাঘাটের এত বহুমুখী ব্যবহার দুনিয়ার আর কোথাও আপনি পাবেন না। আর রাস্তায় না রেখে কেউ যদি নিজস্ব জায়গাতেও বালু রাখে, সেটাও খোলা অবস্থায় রাখার এখতিয়ার কী তার আছে? যানবাহনে পরিবহনের সময়ও বালু ঢেকে রাখার কথা। আর ব্যবসায়ীদের কারণে রাস্তাঘাটে বালু জমা হলে সেটা অপসারণের দায়িত্বও নিশ্চয়ই আশপাশের বাসিন্দাদের নয়। অথচ এই প্রতিটি অনিয়মই বালু ব্যবসায়ীরা করছেন। আগে তা–ও সপ্তাহে এক দিন অন্তত পানি দিয়ে রাস্তার বালু সরাতেন তঁারা, এখন মাসে একবারও সরান না।
এসবের প্রতিকার চেয়ে অনেক দেনদরবার, অনেক লেখালেখি, সালিস–বিচার করেছেন এলাকাবাসী। প্রশাসন থেকে স্থানীয় নেতা, অনেকের কাছেই অনেক ছোটাছুটি করেছেন। প্রতিকার তো পানইনি, উল্টো নিজেরাই এখন হুমকি-ধমকির শিকার। নিরুপায় হয়ে একজন তো আক্ষেপ করে বলেই ফেললেন, ‘সুযোগ হলে বাপ-দাদার ভিটা বালুর ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে চলে যাব।’
এ হাহাকার শোনার কেউ কি নেই? কোনো প্রতিকারই কি করতে পারে না প্রশাসন?