ঘুঘু দেখেছ ফাঁদ দেখোনি—বাংলা এ প্রবাদবাক্যের সঙ্গে কে পরিচিত নয়। সেখানে ঘুঘু দেখার কথা বলা হলেও সেই পাখি কি এখন আগের মতো দেখা যায়? গ্রামবাংলার অবিচ্ছেদ্য চিত্র সেই ঘুঘু পাখির এখন দেখা মেলাই ভার। প্রকৃতি থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। এভাবে ঘুঘু হারিয়ে যাওয়ার জন্য মানুষ ছাড়া আর কাকেই–বা দায়ী করা যায়! এমন বাস্তবতার মধ্যে একসঙ্গে অর্ধশতাধিক ঘুঘু হত্যার ঘটনা ঘটল চাঁদপুরের হাইমচরে। সয়াবিন বীজ খেতে এসে প্রাণ হারাতে হলো সেগুলোকে। কারণ, সেখানে মেশানো ছিল বিষ। এভাবে এতগুলো পাখির মৃত্যু খুবই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত শনিবার উপজেলার দক্ষিণ আলগী গ্রামের ফায়ার সার্ভিস–সংলগ্ন স্বপন দেওয়ান নামের এক কৃষকের জমিতে মরা ঘুঘুগুলো পড়ে ছিল। সয়াবিনের বীজ খাওয়ার অপরাধে জমির মালিক বিষ প্রয়োগ করে মারেন সেগুলোকে। এ ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যাঁদের একজন বলেন, এমনিতেই ঘুঘু পাখি বিলুপ্তির পথে। গ্রামাঞ্চলের খেতখামারে ধান, চাল, গম, ডাল, সয়াবিন চাষের সময় ঘুঘুসহ নানা ধরনের পাখি দেখা যেত। এখন আর এসব পাখি আগের মতো দেখা যায় না। কিন্তু সয়াবিন খেতে কিছু ঘুঘু পাখি খেতে এসেছিল, সেগুলোও বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা হলো। বিষয়টি কৃষি বিভাগসহ প্রশাসনের দেখা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে হাইমচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘বিষ প্রয়োগ করে ঘুঘুসহ যেকোনো পাখি হত্যা করা শুধু অপরাধই নয়, পরিবেশের জন্যও অত্যন্ত ক্ষতিকর। যাঁরাই এ অমানবিক কাজ করেছেন, আমরা খোঁজখবর নিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’ আমরা এখন দেখার অপেক্ষায় তিনি কী ব্যবস্থা নেন। প্রায়ই আমরা পাখি হত্যার ঘটনার খবর পাই, বিশেষ করে ফসলের খেতে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে। আইনগতভাবে পাখি হত্যা অপরাধ হলেও বিষয়টি একেবারে স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে গেছে। কার্যকরভাবে আইন প্রয়োগ না হওয়া বা কারও শাস্তি না হওয়ায় পাখি হত্যা থামছে না।
এ শীত মৌসুমে পর্যাপ্ত অতিথি পাখি না আসা নিয়ে আমরা একাধিক চিঠি পেয়েছি। সুনামগঞ্জে হাওর এলাকায় যেসব জায়গা শীতের পাখিতে মুখর থাকে, এ মৌসুমে তেমনটা দেখা যায়নি। অবাধে পাখি শিকার, বাজারে বিক্রি, হোটেলে পাখির মাংসের চাহিদার কারণে অতিথি পাখির যে নিরাপদ পরিবেশ ছিল, তা বিনষ্ট হয়ে গেছে। প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের ধ্বংস করে কীভাবে একটি সুন্দর ও মানবিক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি আমরা। পাখি রক্ষায় মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।