সম্পাদকীয়

অনেক শিশু পুলিশ সাজতে ভালোবাসে। অন্যদিকে কিছু পুলিশ সদস্যও সম্ভবত শিশুর অভিনয় করতে ভালোবাসেন। তার অন্যতম উদাহরণ মিলবে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। সেখানে কিছু পুলিশ সদস্য টাকা নিয়ে পেছনের অনেক গাড়িকে আগে ঘাট পারাপারের সুযোগ করে দিচ্ছেন বলে আটকা পড়া পরিবহনের কর্মীরা অভিযোগ করেছেন। আর সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা শিশুর সারল্যে বলছেন, এ ধরনের ঘটনার কথা তাঁরা জানেনই না; কেউ তঁাদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগও করেনি। তাঁরা বলছেন, যদি কোনো পুলিশ সদস্য টাকা নিয়ে থাকেন, তাহলে যেন সরাসরি তঁাদের ধরিয়ে দেওয়া হয়।

বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ। সেখানকার গাড়ি পার হওয়ার জন্য চলে আসছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথেও ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় এই দৌলতদিয়া ঘাটে যানজট দেখা দিচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শত শত যানবাহনকে ফেরির জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। দৌলতদিয়া ঘাটে চাপ কমাতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা পণ্যবাহী গাড়ি আটকে রাখা হচ্ছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোয়ালন্দ মোড়ে। সেখানে প্রতিদিন চার-পাঁচ কিলোমিটারজুড়ে গাড়ির সারি পড়ছে। এ সুযোগে কিছু পুলিশ সদস্য টাকা নিয়ে পেছনের অনেক গাড়িকে আগে ঘাট পারাপারের সুযোগ করে দিচ্ছেন।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশের এভাবে টাকা তোলার বিষয়ে কেউ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেনি। সত্যিই তো, তাঁদের কাছে কেউ অভিযোগ দায়ের না করলে পুলিশ কর্মীদের দুষ্কর্মের কথা কর্তারা জানবেন কী করে? শিশুকে যে রূপ বিশদে বুঝিয়ে দিতে হয়, সেইমতো পুলিশকেও তো জানাতে হবে যে পুলিশ কখন, কোথায় চাঁদাবাজি করে, কীভাবে আটকা পড়া গাড়ি থেকে টাকা নেয়।

পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা ‘অভিযোগ হয় নাই’ বললে তা তথ্যের অভাবকে বোঝায় না। বোঝায় দায়বদ্ধতা, কর্তব্যবোধের অভাবকে। দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে সবার সামনেই প্রতিদিন পুলিশ একেকটি গাড়িকে আগে আগে ফেরিতে তুলে দেওয়ার বিনিময়ে এক থেকে দেড় হাজার টাকা নিচ্ছে। কিন্তু সে নিয়ে কথা উঠলেই কর্মকর্তারা বাঁধা গৎটি বাজিয়ে দেন—অভিযোগ তো হয়নি। যেন লিখিত অভিযোগ যদি না হয়ে থাকে, তাহলে তাঁদেরও করণীয় আর কিছু নেই। নিজেদের কাজের নিয়মিত মূল্যায়ন এবং তৎসম্পর্কিত অভাব-অভিযোগ বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকা যে সরকারি কাজেরই অঙ্গ, লিখিত অভিযোগের দাবি তুলে এ কথাটা যেন সম্পূর্ণ অস্বীকার করা চলে। রাস্তায় বা ফেরিঘাটে চাঁদাবাজির মতো অপরাধ যে কিছু ট্রাফিক পুলিশের প্রশ্রয়েই হয়ে থাকে, তা শিশুরাও জানে। এ কারণে আশঙ্কা হয়, এখনো শিশুরা পুলিশ সাজতে গিয়ে পা ঠুকে স্যালুট ঠোকে। এরপর হয়তো হাতটি এগিয়ে দেওয়া শুরু করবে।