জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে এ মুহূর্তে গোটা বিশ্ব যখন উদ্বিগ্ন, আমরা তখন হাঁটছি উল্টো পথে। আমাদের লোভ ও ক্ষমতার নির্মম শিকার হচ্ছে নদী, পাহাড়, গাছপালা, জীববৈচিত্র্য—সবকিছুই। তার মধ্যে আরও দুঃখজনক হচ্ছে, সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি তোয়াক্কাই করা হচ্ছে না। তেমনই চিত্র দেখা গেল সিলেটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পে। সেখানে তিনটি টিলা কেটে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সেটি যে পরিবেশবিরোধী কাজ, তা নিশ্চিতভাবে জানা থাকায় টিনের বেড়ার আড়ালে টিলাগুলো কাটা হচ্ছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, টিলাগড় এলাকায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আইএলএসটি) ভবন দুগ্ধ খামারের পাঁচ একর জায়গায় স্থাপন করা হচ্ছে। সেখানে অধিদপ্তরের অধীন দুগ্ধ খামারের ৭০০ বিঘা জায়গায় ছোট-বড় ৫০টি টিলা। সেখানে এখন শিক্ষা ভবন, শিক্ষক ভবন, ছাত্র ও ছাত্রীনিবাস নির্মাণ করতে গিয়ে তিনটি টিলা কাটা পড়ছে। এর মধ্যে টিলাগুলোর মধ্যভাগ পর্যন্ত কাটা হয়েছে। মোট পাঁচ একর জায়গার মধ্যে অন্তত তিন একর জায়গার টিলা কেটে সমান করা হয়েছে। আগামী শনিবার অধিদপ্তরের সচিব পরিদর্শনে যাবেন, তাই কাজের অগ্রগতি দেখাতে টিনের বেড়া দিয়ে গোপনে দ্রুত টিলাগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে।
কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি বা ছাড়পত্র নেওয়ার প্রয়োজন বোধই করেনি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। সরকারি প্রকল্প বলে কি চাইলেই যেকোনো পাহাড়, টিলা বা গাছ কেটে ফেলা যায়, এমনই হয়তো মনে করেন তাঁরা। জেলা কর্মকর্তা দোহাই দিচ্ছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে কিছু টিলা কাটা পড়েছে। কিন্তু পরিবেশের স্বার্থটা দেখলেন না। অন্য দিকে পরিবেশ অধিদপ্তর জানাচ্ছে, সরকারি প্রকল্পের কাজ হলেও টিলা কাটায় কোনো অনুমতি কাউকে দেওয়া হয় না।
পরিবেশ আইন তো ভঙ্গ করা হয়েছেই, উচ্চ আদালত সিলেট অঞ্চলে পাহাড়-টিলা কাটায় যে সরাসরি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, সেটিও লঙ্ঘন করা হয়েছে। ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হওয়ায় সিলেটে আলাদা করে এমন নির্দেশনা দিয়েছিলেন আদালত। এখন সরকারি কর্তৃপক্ষ হয়ে এভাবে আইন ভঙ্গ ও আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে জনসাধারণকে কী বার্তা দেওয়া হচ্ছে। তার মানে, যে কেউ চাইলে এমন কাজ করতে পারে। ঠিকাদারসহ প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক। টিলাগুলো রক্ষা করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে, সেটিই আমরা আশা রাখি।