তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষে বিশ্বের কৃষিব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। বিশেষ করে কৃষি আবহাওয়াবিষয়ক নির্ভরযোগ্য তথ্য ও পূর্বাভাস জানতে সুবিধা হয়ে গেছে। এতে কৃষি ও কৃষক—উভয়ের ক্ষতিই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছিল কৃষি আবহাওয়ার তথ্য বোর্ড। কিন্তু সেই বোর্ড থেকে কোনো তথ্য পান না সেখানকার কৃষক। এর আগেও আমরা বিভিন্ন জেলায় একই অবস্থা দেখেছি। কৃষি আবহাওয়ার তথ্য সরবরাহের যন্ত্রপাতি তদারকির অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে বহু আগে। এসব নিয়ে কোনো ধরনের চিন্তাভাবনাই নেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে। কৃষি ও কৃষকের ক্ষতিতে তাঁদের কী আসে যায়, এমন মনোভাবই প্রতিফলিত হতে দেখি আমরা।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় এক প্রকল্পে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশজুড়ে বিভিন্ন উপজেলায় ৪ হাজার ৫১টি ইউপিতে স্বয়ংক্রিয় রেইন গজ ও কৃষি আবহাওয়া তথ্য বোর্ড, ৪৮৭টি উপজেলায় কিয়স্ক স্থাপন ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের আবহাওয়াবিষয়ক তথ্য পাঠানোর জন্য ইন্টারনেট সংযোগসহ ৬ হাজার ৬৬৪টি ট্যাব সরবরাহ করা হয়। ঠাকুরগাঁওয়ের পাঁচটি উপজেলায় ৫৩টি ইউনিয়নেও এ প্রকল্পের আওতায় সে সময় প্রতিটি ইউপি ভবনের ছাদে স্থাপন করা হয়েছিল স্বয়ংক্রিয় রেইন গজ মিটার ও সৌরবিদ্যুতের প্যানেল। আর ইউপি ভবনের দর্শনীয় স্থানে স্থাপন করা হয়েছিল আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার তথ্য বোর্ড। এই বোর্ডের মাধ্যমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, ঝড়ের পূর্বাভাস, আলোক ঘণ্টাসহ ১০টি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও তা প্রকাশের ব্যবস্থা রয়েছে।
এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মাঠপর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, আগে ও পরের তিন দিনের কৃষিভিত্তিক আবহাওয়ার নানা তথ্য এই বোর্ডে হালনাগাদ থাকার কথা থাকলেও ঠাকুরগাঁওয়ে সেটা কোনো দিনই সচল ছিল না। প্রকল্পের পরিচালকই স্বীকার করছেন, প্রকল্পটি চালু হওয়ার পর থেকেই মাঠ ও জেলা পর্যায় থেকে যথাযথভাবে মনিটরিং করা হয়নি। এর মাধ্যমেই দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের চরম দায়িত্বহীন ও অবহেলা প্রকাশ পেল, সেই সঙ্গে কোনো জবাবদিহি না থাকার নজিরও। প্রকল্প পাস হলো, অর্থ বরাদ্দ হলো, যন্ত্রপাতি কেনা হলো—এতেই যেন দায়িত্ব শেষ।
সেই প্রকল্প থেকে কৃষকেরা কোনো সুফল পেলেন কি পেলেন না, তা দেখার কোনো দায় নেই যেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। ২০২১ সালের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আরও দুই বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে। এখন যন্ত্রপাতিগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আদতেই যন্ত্রপাতিগুলো সচল হবে কি না, সেগুলো কৃষকের উপকারে আসবে কি না—তা নিয়ে আমরা আসলেই সন্দিহান।