ঢাকা-দিল্লি সমন্বিত অভিযান জরুরি

ভারতের বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) তিন কথিত সদস্যের ঢাকায় গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনায় স্বস্তি ও উদ্বেগ দুটোই আছে। ভারতের কাছ থেকে তালিকা পাওয়ার পরপরই যে গতিতে তাদের পাকড়াও করা হলো, সেটা কম স্বস্তিদায়ক নয়। এর আগেও কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছে। এই সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা যদি সত্যি সত্যি জঙ্গি হয়ে থাকে, তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সাধুবাদ পেতে পারেন। 
বিলম্ব হলেও বর্ধমান বিস্ফোরণের পর মনে হচ্ছে, উভয় দেশের গোয়েন্দা বিভাগ নড়েচড়ে বসেছে। জেএমবির একটি আন্তসীমান্ত যোগাযোগ ও তৎপরতার বিষয়ে গণমাধ্যমে খবরাখবর বহুদিন ধরেই প্রকাশিত হচ্ছিল। ২০০৬-০৭ সালের দিকে বাংলাদেশের গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে খবর ছাপা হয়েছিল। তখন ভারতের সরকারি মহল বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিয়েছিল বলে প্রতীয়মান হয় না। অনেক সময় এসব অভিযান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহারের প্রবণতা লক্ষ করা যায়, এ ক্ষেত্রে সে রকম কিছু হবে না বলেই আমরা আশা করি।
জঙ্গি বা সন্ত্রাসী তালিকা বিনিময়ের উদ্যোগটি ভালো। এতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পক্ষে জঙ্গি বা সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা করতে সুবিধা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে দেওয়া তালিকায় যখন দেশে অবস্থানরত চারজন, ক্রসফায়ারে নিহত একজন এবং ভারত থেকে ফেরত আনা একজন এবং ভারতে নিহত তিনজনের নাম দেখা যায়, তখন গোটা প্রক্রিয়াই হাস্যকর হয়ে পড়ে। যেসব কর্মকর্তা জঙ্গিবিরোধী অভিযানের মতো একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এ রকম দায়িত্বহীন আচরণ করতে পারলেন, তাঁদের অবিলম্বে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
জঙ্গিবাদের সমস্যাটি একই সঙ্গে দেশীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক। বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় তাদের আন্তসীমান্ত নেটওয়ার্কের বিষয়টি সর্বজনবিদিত। কোনো একটি দেশের আইন প্রয়োগকারী বা গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষে জঙ্গিবাদকে নির্মূল করা প্রায় সম্ভব। অতএব, এ ব্যাপারে দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জরুরি। তবে সেটি যে ভুয়া সন্ত্রাসী তালিকা বিনিময় করে সম্ভব নয়, সে কথা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আরেকবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া নিশ্চয়ই অন্যায় হবে না।