ঢাকা নগর পরিবহন

যে রাজধানী শহরে দেড় কোটি মানুষের বাস, সেখানে গণপরিবহনের শৃঙ্খলা ও যানজট নিরসন কেবল জরুরি নয়, অপরিহার্যও। সরকারি পর্যায়ে বারবার আশ্বাস ও উদ্যোগের কথা বলা হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন তেমন দেখা যায় না। ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মূল দাবিও ছিল গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানো ও যাত্রী সাধারণের নিরাপত্তা। নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়ে গত রোববার কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে রাজধানী হয়ে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর সড়কে রুটভিত্তিক কোম্পানির অধীনে একটি বাসসেবা চালু হলো। ৫০টি বাস দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে এ সেবার উদ্বোধন করা হয়েছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’। আমরা একে স্বাগত জানাই।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বিআরটিসি ডিপোসংলগ্ন যাত্রীছাউনিতে এক অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এর উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও উত্তর সিটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, গুলিস্তান, মতিঝিল, সাইনবোর্ড হয়ে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর পর্যন্ত রুটে এ বাস চলাচল করবে। নির্ধারিত জায়গা ছাড়া এ বাস থামবে না। টিকিট ছাড়া যাত্রীরা বাসে উঠতে পারবেন না। টিকিটও দেওয়া হচ্ছে ডিজিটাল যন্ত্রের মাধ্যমে। পর্যায়ক্রমে ১০০টি বাস নামানো হবে এবং ২০২৩ সালের মধ্যে পুরো ঢাকায় এ সেবা চালু করা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

বাসসেবায় বিশৃঙ্খলা দূর করতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক ২০১৫ সালে গুলশান-বনানী এলাকায় ‘ঢাকা চাকা’ নামে একটি পরিবহনসেবাও চালু করেন। সেটি ইতিমধ্যে ওই এলাকায় পরিবহনসেবায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছে। অন্যান্য রুটেও সেটি চালুর পরিকল্পনা ছিল প্রয়াত মেয়রের। কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহল ও ক্ষমতাধর পরিবহনমালিকদের বিরোধিতার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। তবে ছয় বছর পর ঢাকা নগর পরিবহন চালুর মধ্য দিয়ে সেই পরিকল্পনার আংশিক প্রতিফলন দেখা গেল। যদিও নতুন বাস নয়, পুরোনো বাস দিয়ে চালু হলো এ সেবা। পরীক্ষামূলকভাবে ৫০টি বাস দিয়ে এ সেবা চালু হলেও সেটি শেষ পর্যন্ত সফল হবে কি না, সেই প্রশ্নও আছে। অতীতে সরকারের অনেক ভালো উদ্যোগ সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি ও অদক্ষতার কারণে ব্যর্থ হয়েছে। ঢাকা শহরের যানজট কমানোর লক্ষ্যে ঢাকঢোল পিটিয়ে ওয়াটার বাস চালু করা হয়েছিল, এর পেছনে বিপুল অর্থও খরচ করা হয়। শেষ পর্যন্ত ফলাফল শূন্য।

যেখানে ঢাকা শহরে সারাক্ষণ যানজট লেগে থাকে, সেখানে রুটভিত্তিক একই কোম্পানির বাস চালু হলে মালিকদের ক্ষতির আশঙ্কা নেই। কয়েকটি কোম্পানি মিলে তঁারা কনসোর্টিয়ামও তৈরি করতে পারেন। এখন যেমন কোনো কোনো কোম্পানি রুট পারমিটের নামে বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকেন; রুটভিত্তিক পরিবহনে সেটি থাকবে না। সবাই লভ্যাংশ ভাগ করে নিতে পারবেন। তবে রুটভিত্তিক বাস চালুর ক্ষেত্রে নতুন বাসকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব ফিটনেসবিহীন ও লক্কড়ঝক্কড় বাস সড়ক থেকে তুলে নিতে হবে। এসব বাসও অনেক সময় দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ঢাকা শহরে যানজট কমাতে দুই সিটি করপোরেশন আন্তনগর বাস টার্মিনালগুলো শহরে বাইরে নেওয়ার যে পরিকল্পনা নিয়েছিল, তা–ও যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করতে হবে।