তাড়াশের অনুপ্রেরণাকারী জনপ্রতিনিধি

সম্পাদকীয়

এ দেশের জনপ্রতিনিধিদের বিতর্ক পিছু ছাড়ে না। অভিযোগ ছাড়া কোনো জনপ্রতিনিধি পাওয়াও এখন বিরল ঘটনা। যদিও কোনো বিতর্ক বা অভিযোগ গায়ে মাখেন না জনপ্রতিনিধিরা। এলাকার নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে কোনো অপরাধ বা আইন লঙ্ঘন করতে কুণ্ঠাবোধ করেন না তাঁদের কেউ কেউ। যার কারণে স্থানীয় নির্বাচনে ইউপি চেয়ারম্যান বা ইউপি সদস্য হতে খুনোখুনির ঘটনা এখন সাধারণ ঘটনাই বলা যায়। অস্ত্রবাজি ও ভোট ডাকাতির চিত্র ফলাও করে উঠে আসে সংবাদমাধ্যমে। ফলে একজন জনপ্রতিনিধি সৎ, নির্লোভ, জনদরদি বা সাধারণ জীবনযাপনকারী হতে পারেন, সেটি অনেকে ভাবতে পারেন না। এরপরও আমরা একজন খোদেজা খাতুনের দেখা পাই। স্থানীয় এই জনপ্রতিনিধির কোনো ঘরবাড়ি বা জমি কিছুই নেই, খাবার হোটেলে কাজ করে সংসার চালান। কিন্তু জনগণের সেবা আন্তরিকতায় তাঁর কোনো ঘাটতি নেই।

প্রথম আলোর প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বারুহাসের ইউপি সদস্য খোদেজা খাতুন। ৭০ বছর বয়সী এই নারী দুবারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। প্রতি তিন মাস পর সম্মানী ভাতা হিসেবে ১০ হাজার ৮০০ টাকা পান তিনি। এর বাইরে তিনি ছয় কিলোমিটার দূরে তাড়াশ বাজারে একটি খাবারের হোটেলে দৈনিক দেড় শ টাকার মজুরিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেন। পান বিক্রেতা স্বামীকে নিয়ে থাকেন খাসজমিতে একটি টিনের চালাঘরে। দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে হয়তো অনেকের ভাগ্যবদল হয়েছে তঁার মাধ্যমে, চাইলে অন্য অনেক জনপ্রতিনিধির মতো তিনিও অনিয়ম করে নিজের ভাগ্য বদলাতে পারতেন, কিন্তু সেটি করেননি। মানুষের ভালোবাসাকে তিনি বড় সম্পদ মনে করেছেন। এ জন্য মানুষও তঁাকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার বেছে নিয়েছেন।

আজকের দিনে খোদেজার মতো সৎ জনপ্রতিনিধি বিরল। স্থানীয় সুধীমহলের মতো দেশে যেখানে প্রায় সব জনপ্রতিনিধি নিজের পদকে ক্ষমতা ও অর্থ বানানোর হাতিয়ার মনে করেন, সেখানে খোদেজা খাতুন একজন রোল মডেল। তিনি যেন সৎভাবে বেঁচে থাকতে পারেন, এ জন্য তাঁর পাশে দাঁড়ানো উচিত। টিনের বেড়া ও মাটির মেঝের ঘরে কষ্টকর জীবনযাপন করেন বয়স্ক দম্পতি। এমনকি সেখানে নেই স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার ব্যবস্থাও। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানাচ্ছেন, গৃহহীন ও ভূমিহীন তালিকায় খোদেজা খাতুনের নাম রয়েছে। তাঁর জন্য আর যা যা করা যায়, করা হবে। আমরা আশা করছি, খোদেজা খাতুনের দ্রুত একটি মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে। তাঁর মতো একজন জনপ্রতিনিধি আমাদের জন্য আদর্শ। আমরা তাড়াশের এই ইউপি সদস্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।