সম্পাদকীয়

কিছু দুর্যোগ আছে, যা অসম্ভব আকস্মিকতায় জনপদে আঘাত হানে। মানুষ ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর নিম্নতম সময় বা সুযোগ পায় না। প্রকৃতি তার তাণ্ডবলীলা চালিয়ে চলে যায় এবং বাকরুদ্ধ হয়ে স্বীয় সর্বনাশ প্রত্যক্ষ করা ছাড়া মানুষের গত্যন্তর থাকে না।

পাহাড়ি ঢলের অপ্রতিরোধ্য আগ্রাসন সেই শ্রেণির দুর্যোগ। ক্ষিপ্র গতিসম্পন্ন নিম্নাভিমুখী এই ঢল যখন সমতলে আছড়ে পড়ে, তখন ফসল নষ্ট এবং বাড়িঘর ধ্বংসের পাশাপাশি সড়ক ও সেতুর মতো জীবন-জীবিকাঘনিষ্ঠ জনসম্পদ ধ্বংস করে। সড়ক ও সেতু ভেঙে গেলে দুর্যোগজনিত ক্ষতির মাত্রা ও ব্যাপ্তি বহুগুণ বেড়ে যায়।

আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের জনজীবন সেই ধরনের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে পড়েছে। সেখানে পাহাড়ি ঢলে ফসলহানি ও ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ার মতো মহাসর্বনাশ তো হয়েছেই; পাশাপাশি সেখানকার ৫৫২ কিলোমিটার সড়ক ভেঙে গেছে। অতিগুরুত্বপূর্ণ আটটি সেতু ও কালভার্টের কোনোটি সম্পূর্ণ, কোনোটি অংশত ধ্বংস হয়েছে। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলায়।

দোয়ারাবাজার উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের পাশে সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার-ছাতক সড়কের সেতুটি ঢলের পানিতে মুহূর্তের মধ্যে ভেসে গেছে। এখন এই সড়ক দিয়ে সুনামগঞ্জ থেকে ছাতকের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভোগান্তি পোহাচ্ছে এলাকার অন্তত ৩০টি গ্রামের মানুষ। শুধু এই একটি সেতু নয়, সুনামগঞ্জে আটটি সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ৫৫২ কিলোমিটার সড়কের।

কিছু বেড়িবাঁধেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বেশি ক্ষতি হয়েছে গ্রামীণ রাস্তাঘাটের। অনেক সেতুর সংযোগ সড়ক ধসে গেছে। অর্থাৎ জেলার চলাচল পথ মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। কৃষিপণ্য আনা-নেওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। গুরুতর রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয় অর্থনীতির ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ছে।

এ অবস্থায় বন্যাকবলিত সুনামগঞ্জে ত্রাণ ও জরুরি সহায়তা কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সড়ক ও সেতু সংস্কারে হাত দেওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাজনিত সময়ক্ষেপণ হলে তা এ অঞ্চলের মানুষের দুঃখকষ্টকে আরও দীর্ঘমেয়াদি করবে। এ বিষয়ে দ্রুত সরকারি উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।