নতুন করে পুরোনো উৎসবে ফেরা

সম্পাদকীয়

ভয়াবহ মহামারি পেরিয়ে স্বস্তিদায়ক এক রমজান মাস পার করলেন গোটা বিশ্বের মুসলমানরা। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতরও ফিরে এল তারই ধারাবাহিকতায়। ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। এ দেশের উৎসবপ্রিয় মানুষের জন্য ঈদ যেন আরও বেশি কিছু। তবে গত দুই বছর অনেকটা ঘরবন্দী থেকে ঈদ পালন করতে হয়েছে তাঁদের। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় ঈদকে ঘিরে মানুষের মধ্যে ফিরে এসেছে নতুন উদ্দীপনা। এবারের ঈদের বাজারে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এ উৎসবকে ঘিরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসা। করোনার কারণে পথে বসা অনেক ব্যবসায়ী এবং বেকার হয়ে পড়া অনেক মানুষের মধ্যে আবার কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। দুর্যোগ ও দুঃসময়ে নুয়ে পড়া অনেক পরিবারের মুখে আবারও ফুটবে হাসি।

কর্মব্যস্ত নাগরিক জীবনের কাছে ঈদ মানে বাড়ি ফেরা। নাড়ির টানে গ্রামে ফেরা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ঈদকে কেন্দ্র করে এবার ঢাকা ছাড়তে পারেন প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ। সাপ্তাহিক বন্ধ মিলিয়ে এ বছর দীর্ঘ ঈদের ছুটি পাচ্ছে মানুষ। ফলে এবারের ঈদে রেকর্ডসংখ্যক মানুষ শহর ছাড়ছে। এ ছাড়া মহামারিতে অনেক মানুষ গত দুই বছর পরিবার বা প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ পালন করতে পারেনি। ফলে পুরোনো সেই আনন্দে, আলিঙ্গনে মুখর হয়ে উঠবে এবার ঈদ। মহামারিতে অনেকে হারিয়েছেন পরিবারের সদস্য, কাছের মানুষ ও বন্ধুবান্ধব। সংক্রমণভীতির কারণে শেষযাত্রায় যোগ দেওয়ারও সুযোগ হয়নি প্রিয় মানুষের সঙ্গে। এবারের ঈদযাত্রা মানে সেসব মানুষের কাছেও ফেরত যাওয়া, তঁাদের কবর জিয়ারত করা।

ঈদযাত্রাকে ঘিরে রাস্তায় যানজটে আটকে পড়ে মানুষ, শিকার হতে হয় ভয়াবহ দুর্ভোগেরও। এবার আরও বেশি করুণ পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছিল। তবে আশার কথা হচ্ছে, সড়কে গাড়ির চাপ থাকলেও অন্যান্য বারের মতো দীর্ঘ যানজটের শিকার হতে হয়নি মানুষকে। ট্রেনের টিকিট পাওয়া নিয়ে চরম বিড়ম্বনা তৈরি হলেও সূচি মেনেই কমলাপুর থেকে ছেড়ে গেছে ট্রেনগুলো। গত শুক্রবার পর্যন্ত ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেনি। ফলে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। যাত্রী বোঝাই করে সদরঘাট থেকে ছেড়েছে লঞ্চ। অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ায় কয়েকটি লঞ্চকে জরিমানাও করা হয়েছে। কালবৈশাখী মৌসুমে লঞ্চ চলাচলে কোনো ধরনের অনিয়মে ছাড় দেওয়া যাবে না। আশা করি, এ বিষয়ে সতর্ক থাকবে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ।

ঈদযাত্রা মানে শুধু বাড়ি ফেরা নয়, বাড়ি থেকে যঁার যাঁর অবস্থানে ফিরেও আসা। ফলে সব মানুষ পরিবার ও প্রিয় মানুষের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপন করে নিরাপদে ফিরে আসবেন, সেটিই আমরা কামনা করি। ঈদের ছুটিতে প্রায় ১০ লাখ মানুষ কক্সবাজারে ঘুরতে যাবেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। এতেই বোঝা যাচ্ছে, বিপুল মানুষ সারা দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ভিড় করবেন। করোনায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটন অর্থনীতির জন্য বড় সুখবর এটি।

ঈদুল ফিতর সমাজে যাবতীয় বৈষম্য দূর করার বার্তা দেয়। এর মাধ্যমে প্রকাশ পায় সর্বজনীনতা। ঈদ আমাদের সামষ্টিক জীবনে যে মিলন ও শুভবোধের চর্চার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, তা সঞ্চারিত হোক সবার প্রতিদিনের জীবনযাপনে। ঘুচে যাক মানুষে মানুষে দূরত্ব, বিভেদ ও বিভাজনের সম্পর্ক। নিছক আনুষ্ঠানিকতা বা আনন্দ উদ্‌যাপন নয়, ঈদ হোক জীবনকে নবায়ন করার আহ্বান। সবাইকে ঈদ মোবারক।