নীরবতা ভেঙে সুরক্ষাবলয় তৈরি করুন

সম্পাদকীয়

শিশুর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান কোনটি? প্রথাগত উত্তরটা হলো নিজের ঘর। কিন্তু সম্প্রতি একটি জরিপে যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে সনাতন এই উত্তরটায় বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, নিজ ঘরেই ৯৫ দশমিক ৮ শতাংশ শিশু নির্যাতনের শিকার হয়। শাস্তি ও নিয়মানুবর্তিতার কথা বলে শিশুর ওপর এ নির্যাতন চালানো হয়। ঘরের বাইরেও শিশুরা মানসিক, শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। শিশুশ্রমে লঙ্ঘিত হচ্ছে অধিকার। পর্নোগ্রাফি ও ডিজিটাল মাধ্যম শিশু নিপীড়নের বড় ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ইনসিডিন বাংলাদেশ ১১টি জেলায় শহর ও গ্রামের শিশুদের মধ্যে এ জরিপ চালায়। বলা হচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কাজের জায়গা কিংবা অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানে শিশু যতটা নির্যাতিত হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি নির্যাতিত হচ্ছে নিজ গৃহে। প্রতিবন্ধী শিশুরা শুধু প্রতিবন্ধকতার কারণে পরিবারে ও সমাজে নিগৃহীত হচ্ছে।

পরিবারে নির্যাতনের শিকার শিশুদের মধ্যে ৯৬ দশমিক ২ শতাংশ মেয়ে এবং ৯৪ দশমিক ৫ শতাংশ ছেলে। শিশুদের ৫৫ শতাংশ জানিয়েছে, তারা পরিবারের মধ্যে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। গৃহে ৫০ শতাংশ মেয়েশিশু এবং ৬০ শতাংশ ছেলেশিশু যৌন হয়রানির শিকার। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের নির্যাতনের পরিমাণ ৮২ শতাংশ। ঘরের বাইরে ৬৭ দশমিক ১ শতাংশ, কর্মক্ষেত্রে ৫৫ দশমিক ৩ শতাংশ শিশু নিপীড়ন ও সহিংসতার শিকার হয়।

শিশু নিপীড়নের এ চিত্র যেমন ভয়াবহ, তেমনি উদ্বেগজনক। প্রশ্ন হলো, শিশুরা যদি ঘরেই নিরাপদ না হয়, তাহলে তারা নিরাপদ কোথায়? শাস্তি কিংবা নিয়মানুবর্তিতা শেখানোর নামে শিশু নির্যাতন যে অনুচিত, সেই উপলব্ধি ও সচেতনতা এখনো অভিভাবকদের মাঝে গড়ে ওঠেনি।

এ ছাড়া ঘরের বাইরে শিক্ষক, শারীরিক প্রশিক্ষক, নিরাপত্তাপ্রহরী, দোকানদার, ধর্মশিক্ষা প্রশিক্ষক, প্রতিবেশী কিংবা অচেনা ব্যক্তিরা রয়েছেন নিপীড়নকারীদের দলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্যাতিত শিশু ভয়ে অপরাধীর নাম বলে না।

শিশু অধিকার সুরক্ষা ও তাদের নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষার জন্য অঙ্গীকার ও আইন দুই-ই রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর প্রয়োগ ও প্রতিফলন নেই। নিপীড়নের শিকার শিশু নানা মানসিক ট্রমা নিয়ে বেড়ে ওঠে।

তাদের বিকাশ হয় বাধাগ্রস্ত। লোকদেখানো কিংবা মৌখিক প্রতিশ্রুতি নয়, শিশু সুরক্ষায় অবশ্যই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে সামাজিক নীরবতা ভাঙার এখনই সময়। পরিবার, শিক্ষক, পাড়া-মহল্লার নেতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, এনজিও ও জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে শিশুর জন্য সামাজিক সুরক্ষাবলয় নির্মাণে।