মাঠের ফসলের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক পঙ্গপালের সম্ভাব্য আক্রমণ সম্পর্কে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন; যদিও তাঁরা বলেছেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আক্রমণের আশঙ্কা কম। উদ্বেগের বিষয় হলো, বিভিন্ন দেশে ঘূর্ণিঝড়ের পর পঙ্গপালের আক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকে। ভারতে আম্পান ও নিসর্গ নামে দুটি ঘূর্ণিঝড় হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে পঙ্গপাল পাকিস্তান ও ভারতের রাজস্থান, মহারাষ্ট্রের পর মধ্যপ্রদেশ ও উত্তর প্রদেশে হানা দিয়েছে। সেখানে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল খেয়ে ফেলেছে। এরপর ভোপালের দিকে এগিয়ে আসছে, যা বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে খুব দূরে নয়। আম্পান বাংলাদেশেও আঘাত হেনেছে।
পঙ্গপাল ঘাসফড়িং গোত্রের পতঙ্গ। এরা যখন বিচ্ছিন্ন থাকে, তখন খুব ক্ষতিকর নয়। কিন্তু হাজার হাজার, কখনো লাখ লাখ পতঙ্গ যখন একত্র হয়, তখন মাইলের পর মাইল খেতের শস্য সাবাড় করে। প্রায় প্রতিবছর আফ্রিকায় এই অঘটন ঘটে থাকে। শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে সাধারণত আফ্রিকা অঞ্চলে পঙ্গপালের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এশীয় অঞ্চলেও এদের আনাগোনা বেড়েছে। যেখানে খাবার বেশি পায়, সেখানেই ঘাঁটি গাড়ে। জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) দক্ষিণ এশিয়ার জন্য সতর্কবার্তা দিলেও বাংলাদেশে এর সম্ভাবনা কম বলে মনে করে। সামনে বর্ষা মৌসুম, এটি বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হতে পরে। পঙ্গপাল বর্ষা এড়িয়ে চলে। তাই বলে আমাদের হাত গুটিয়ে বসে থাকার সুযোগ নেই। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ মাঠপর্যায়ে সতর্কতামূলক নির্দেশনা দিয়েছে। কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভারতের পঙ্গপালের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে। তারা এ কাজে এফএওকেও যুক্ত করেছে।
প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, পঙ্গপালের সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকানোর প্রস্তুতি হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে একটি টাস্কফোর্স ও অ্যাপ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এটিকে আমরা ইতিবাচক উদ্যোগ বলে মনে করি। পঙ্গপাল যদি ভারতের সীমানা ডিঙিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ না করে, খুবই ভালো কথা। কিন্তু কথায় বলে, সাবধানের মার নেই। বাংলাদেশে পঙ্গপালের বড় আক্রমণ এখানে হয়নি। তবে কয়েক বছর আগে আখখেতে পঙ্গপাল পড়েছিল। গত বছর এই পঙ্গপালের সমগোত্রীয় আর্মি ওয়ার্ম ভুট্টার খেতে ছড়িয়ে পেড়েছিল।
পঙ্গপাল ধ্বংস করতে সাধারণত দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়—একটি প্রাকৃতিক, ভারতে ১০ লাখ হাঁস ছেড়ে পঙ্গপালের আক্রমণ অনেকটা সামাল দেওয়া গেছে। দ্বিতীয় পদ্ধতি হলো ড্রোন থেকে বা অন্য উপায় তরল রাসায়নিক ছিটানো। এর বিপদ হলো, পঙ্গপালের সঙ্গে কৃষিজমির জন্য উপকারী পোকামাকড়ও ধ্বংস হয়ে যায়। কমে যায় মাটির উর্বরতাও। তাই প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পঙ্গপাল মোকাবিলার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়াই হবে উত্তম কাজ।