সম্পাদকীয়

গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে বিএনপি ঢাকাসহ সারা দেশে দুই দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছিল। গত শুক্রবার ঢাকায় তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হলেও পরদিন বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বাধার মুখে পড়েন। কোনো কোনো স্থানে ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা, চেয়ার ছুড়ে মারার অভিযোগও এসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, শনিবার সুনামগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, ফেনী ও নরসিংদীতে বিএনপি বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। অন্যদিকে, খুলনায় পুলিশ বিএনপিকে কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি।

নগর বিএনপির নেতা শফিকুল আলমের অভিযোগ, ‘বিক্ষোভ সমাবেশ করার জন্য আমরা প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার পরও পুলিশ সমাবেশ করতে দেয়নি। তারা সমাবেশের মঞ্চ ভাঙচুর করে এবং চেয়ার নিয়ে যায়। বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে মিছিলসহ নেতা-কর্মীরা আসতে থাকলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়।’

সংবিধানে আছে, ‘যুক্তিসংগত বিধিনিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা, শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।’ যেসব স্থানে পুলিশ বাধা দেয়নি, সেসব স্থানে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কোনো সমস্যা হয়নি। তাহলে অন্যান্য স্থানে কেন বাধা দেওয়া হলো? গণতন্ত্র মানলে বিরোধী দলকে শান্তিপূর্ণ সভা–সমাবেশ করতে দিতে হবে।

উদ্বেগের বিষয় হলো আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণির সদস্যের মধ্যে ক্ষমতাসীনদের খুশি করার প্রবণতা আছে। সরকার কাউকে ধরে আনতে বললে তাঁরা বেঁধে আনেন। তাঁরা ভুলে যান যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। প্রজাতন্ত্রের সব নাগরিকের নিরাপত্তা দেখা তাঁদের দায়িত্ব, দলবিশেষের নয়।

বিরোধী দলের সভা–সমাবেশে বাধা দেওয়ার বিষয়ে আমরা সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করছি। তাঁরা মুখে বলেন বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে কোনো বাধা নেই, অথচ বাস্তবে পদে পদে বাধা দেওয়া হয়।

সবকিছু দলীয় দৃষ্টিতে দেখা ঠিক নয়। আজ যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁরা দীর্ঘদিন বিরোধী দলে ছিলেন। সে সময় সরকারের দমন–পীড়নের বিরুদ্ধে তাঁদের ন্যায়সংগত আন্দোলন সমর্থন করেছি ও তৎকালীন সরকারের দমননীতির কঠোর সমালোচনা করেছি। ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে গণতান্ত্রিক অধিকারের সংজ্ঞা বদল হতে পারে না।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, কোথাও কোথাও পুলিশ বিএনপির মিছিল-সমাবেশে বাধা দেওয়ার ঘটনা বেমালুম অস্বীকার করেছে; যদিও তাদের বাধা দেওয়ার খবর ও ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

আবার কোথাও ‘অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে’ সমাবেশ করতে না দেওয়ার কথা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা স্বীকারও করেছেন। মনে রাখতে হবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতি উৎসাহী সদস্যের কাছে যা অপ্রীতিকর বলে মনে হয়, তা জনগণের কাছে অপ্রীতিকর না–ও হতে পারে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শান্তি প্রতিষ্ঠায় যা যা প্রয়োজন, তা করবেন। তাই বলে বিরোধী দলের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দিতে তাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের ভাষা কেড়ে নিতে পারেন না। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা মুখে বিরোধী দলকে সভা–সমাবেশ করার সুযোগ দেওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমে তার প্রতিফলন থাকবে, এটিই কাম্য।