প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদেরও শাস্তির আওতায় আনুন

সম্পাদকীয়

জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির জন্য রাজধানীর একটি জলাধার ও দুটি খাল খনন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। গত বছর বর্ষা মৌসুমে যখন খননকাজ চলছিল, তখনই প্রকল্পটিতে কর্মপরিকল্পনার ঘাটতির বিষয়টি প্রথম আলোর প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল। সে সময় ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করলেও এখন বলছে, সঠিক কর্মপরিকল্পনা ও তত্ত্বাবধান ছাড়া তড়িঘড়ি করে কাজ করা হয়েছে। পানির প্রবাহ স্বাভাবিক করতে চাইলে আবারও খননকাজ চালাতে হবে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানায়, রাজধানীর কল্যাণপুর পাম্প হাউসের সামনের জলাধার এবং মিরপুরের বাউনিয়া ও সাগুফতা খালের খনন ও পরিষ্কারের জন্য ডিএনসিসির বর্জ্যব্যবস্থাপনা বিভাগ গত বছরের ৩০ মে ক্রিয়েশন ট্রেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দুটি ভাসমান এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) ভাড়া নেওয়ার কার্যাদেশ দেয়। তবে সিটি করপোরেশন থেকে কাজের বিষয়ে ঠিকাদারের কর্মীদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। কর্মকর্তাদের এমন গাফিলতির সুযোগে ঠিকাদারের কর্মপরিকল্পনা জমা দেওয়ার নির্দেশ থাকলেও সেটা দেননি। এ ছাড়া চুক্তিতে প্রতিটি ভাসমান খননযন্ত্রের দৈনিক ৮ ঘণ্টা ও মোট ৬০ দিন কাজ করার কথা থাকলেও বেশির ভাগ সময় সেগুলো বসিয়ে রাখা হয়েছিল। খননকাজে অনিয়মের সত্যতা পাওয়ায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে বিলের প্রায় ২৪ শতাংশ কেটে রাখার সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু শাস্তির বদলে ঠিকাদারকে প্রায় পুরো টাকাই দেওয়া হয়েছে।

খননের ছয় মাস পর জলাধার ও খাল দুটি এখন আগের মতোই মৃতপ্রায়। ডিএনসিসির কর্মকর্তার ভাষ্য থেকেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। একটি এক্সকাভেটর দিয়ে টানা দুই মাস খনন করা হয়েছে, অথচ দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন নেই। অন্যদিকে খনন করা মাটি ও বালু জলাধারেই ফেলা হয়েছিল। কারণ, মাটি ও বর্জ্য পাড়ে নিতে ব্যবহৃত লোহার তৈরি ড্রামে কাজ শুরুর কিছুদিন পরেই ছিদ্র তৈরি হয়।

গত বছরের ২৩ আগস্ট ‘কর্মপরিকল্পনা ছাড়াই খাল খননের কাজ’ শিরোনামে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন ছাপা হয়। সে সময় ডিএনসিসির মেয়র বলেছিলেন, ‘এ কাজ দিয়েই যেখানে ঢাকা শহরের পানি ১২ ঘণ্টার বেশি জমা থাকত, সেটা তিন ঘণ্টায় নামিয়ে আনতে পেরেছি। সুতরাং কাজ যে হয়েছে, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই।’

কিন্তু সন্দেহটিই শেষ পর্যন্ত সত্যে পরিণত হয়েছে। ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষের গাফিলতির সুযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নয়ছয় করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। জনগণের এত অর্থের অপচয় হলো, এর দায়টা কে নেবে? এ ক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদেরও জবাবদিহি ও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।