বগুড়া পৌরসভা নির্বাচন

সম্পাদকীয়

জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সময় ভোটাররা নিজেদের বিবেচনায় সর্বোত্তম প্রার্থীকে ভোট দেবেন, এটাকেই বলে ভোটাধিকার। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নাগরিকদের এই সংবিধানপ্রদত্ত অধিকার সবচেয়ে প্রিয় ও মূল্যবান অধিকার হিসেবে বিবেচিত। গণতন্ত্র নাগরিকদের এই অধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করে। কিন্তু যদি এমন হয় যে কোনো নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিত্বের পদগুলোর জন্য যেসব ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয়েছেন, তাঁদের একটা বড় অংশের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার বিচার চলছে, তাহলে নির্বাচন নামক ব্যবস্থাটির কী অবস্থা হয়? বলার অপেক্ষা রাখে না যে তখন ওই আসামিদের মধ্য থেকেই কাউকে না কাউকে বেছে নেওয়া ছাড়া ভোটারদের গত্যন্তর থাকে না। অবশ্য কোনো প্রার্থীকেই পছন্দ না হলে ভোটদান থেকে বিরত থাকার অধিকারও ভোটারদের আছে, কিন্তু তাহলে তো নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্যই অপূর্ণ থেকে যায়।

২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনের মেয়র ও কাউন্সিলরের পদগুলোতে যে মোট ১৮৪ জন প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৬৩ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে মামলা চলছে। হত্যা মামলার আসামিই আছেন ১৯ জন; অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামি ৯ জন। এ ছাড়া আরও যেসব অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামিরা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন, সেগুলোর মধ্যে আছে হত্যা করার চেষ্টা, চাঁদাবাজি, মারামারি, প্রতারণা, নাশকতা, ভাঙচুর ও নারী নির্যাতন। হত্যা মামলার আসামি হয়েছেন এমন প্রার্থীদের মধ্যে চারজন আওয়ামী লীগের ও দুজন বিএনপির সমর্থন পেয়ে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন। বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়ে যিনি মেয়র পদে দাঁড়িয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ পাঁচটি মামলা বিচারাধীন আছে। জামায়াতে ইসলামীর এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ মোট ৫১টি মামলা আছে। মামলার আসামি প্রার্থীদের অধিকাংশই রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট; কেউ কেউ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক পদে রয়েছেন। দলের মনোনয়ন পাননি, কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন এবং কিছু ব্যক্তিও মামলার আসামি। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ দলীয় মনোনয়নেই নির্বাচন করছেন।

সব মিলিয়ে আসন্ন বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনের প্রার্থীদের সম্পর্কে যে চিত্র তাঁদের দেওয়া হলফনামা থেকেই পাওয়া যাচ্ছে, তাতে মনে হয়, নির্বাচনটি যেন বহুলাংশে ফৌজদারি মামলার আসামিদের জনপ্রতিনিধি হওয়ার প্রতিযোগিতা। শুধু বগুড়া পৌরসভা নয়, সারা দেশের চিত্রই কমবেশি এই। যদিও বিচারাধীন মামলার আসামিদের অপরাধী সাব্যস্ত করার সুযোগ নেই, তবু নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে তাঁদের সংখ্যা এত বেশি হলে ভোটারদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া বেশ কঠিন হওয়ার কথা।