বাংলাদেশ ব্যাংক ২২৫টি সহকারী পরিচালক (জেনারেল) পদে নিয়োগের জন্য চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে কোনো ফি ছাড়াই আবেদনপত্র আহ্বান করেছে। প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, এ পদে যোগ্যতা পূরণ সাপেক্ষে অনলাইনে ফরম পূরণের মাধ্যমে ফি ছাড়াই আবেদন করা যাবে আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগসংক্রান্ত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। ১৫ জুনের আগে যাঁদের স্নাতক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, শুধু তাঁরা আবেদন করতে পারবেন। আবেদন করার সময় সিভি চিহ্নিত নম্বর, ট্র্যাকিং নম্বর ও পাসওয়ার্ড যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। পরীক্ষার প্রবেশপত্র ডাউনলোডসহ বিভিন্ন কাজে এটি দরকার হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ঘোষণা বেকার চাকরিপ্রার্থীদের জন্য সুখবরই বটে। বাংলাদেশে বেকারত্ব, বিশেষ করে শিক্ষিত বেকারের হার তুলনামূলক বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেওয়ার পরও লাখ লাখ তরুণকে চাকরির জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে হলে মোটা অঙ্কের ফি দিতে হয়; যা তাঁদের পক্ষে বহন করা কঠিন। অনেকে বাড়ি থেকে টাকাপয়সা না আনতে পেরে টিউশনি করে চাকরির আবেদনের ফি জোগাড় করেন।
সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফি ছাড়া আবেদনপত্র গ্রহণের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। অন্যরা চাকরিপ্রার্থীদের সমস্যা অনুধাবন করতে না পারলেও তারা পেরেছে।
চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে অস্বাভাবিক হারে ফি নেওয়া হয়। ৫০ টাকা থেকে শুরু করে এই ফির পরিমাণ ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনে পরীক্ষায় তিন পদে আবেদন ফি রাখা হয় ৭০০, ৫০০ ও ৩০০ টাকা। সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশের পরীক্ষার চাকরির ফি দুই পদের জন্য যথাক্রমে ২২৪ ও ৫৬০ টাকা করে। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের লাইন ক্রু লেভেল-১-এর আবেদন ফি ১০০ টাকা। মেট্রোরেলে আবেদন ফি ৫০০ টাকা। বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ২০০ টাকা। সাধারণ বীমা করপোরেশনে আবেদন ফি যথাক্রমে ৫০০ ও ৩০০ টাকা। নৌবাহিনীতে আবেদন ফি ৭০০ টাকা। আর সবচেয়ে কম ফি নিয়ে থাকে ডাক বিভাগ ১১২ ও ৫৬ টাকা।
সরকারের নীতিনির্ধারকদের দাবি, ডিজিটাল বাংলাদেশ কায়েম করা হয়েছে। সেটাই যদি হবে, তাহলে চাকরির দরখাস্ত আহ্বানের নামে বেকার তরুণদের কাছ থেকে ফির নামে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে কেন? চাকরিপ্রার্থীদের আবেদনপত্র বাছাই, পরীক্ষা নেওয়া সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের দৈনন্দিন কাজের অংশ। এর জন্য তাঁরা আলাদা পারিতোষিক পেতে পারেন না। আবার অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করা হলেও দাপ্তরিক খরচও থাকে না।
এ নিয়ে গণমাধ্যমে অনেকবার প্রতিবেদন হয়েছে, চাকরিপ্রার্থীরা ফি না নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তথা সরকার আমলে নেয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক সহকারী পরিচালক পদে বিনা ফিতে আবেদনপত্র আহ্বান করে এটা প্রমাণ করেছে যে ফি ছাড়াও ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব। কাজটি বাংলাদেশ ব্যাংক পারলে অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান কেন পারবে না?
যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা এখনো তথ্যপ্রযুক্তিতে স্বাবলম্বী হতে পারেনি, অবিলম্বে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। মুখে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলবেন, আর কাজ করবেন সেই সেকেলে পদ্ধতিতে, তা হতে পারে না। চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে কোনো ফি নেওয়া যাবে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এই রীতি মানলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও মানতে বাধ্য হবে। বেকার তরুণদের ফির খড়্গ থেকে মুক্ত করুন।