দেশের ২৮তম গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে জকিগঞ্জের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এই গ্যাসক্ষেত্রে ৬ হাজার ৮০০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। ৭০ শতাংশ উৎপাদন বিবেচনায় ৪ হাজার ৮০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করা যাবে; যার বর্তমান বাজার মূল্য ১ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। করোনাকালে বহু দুঃসংবাদের মধ্যে এটি নিঃসন্দেহে আনন্দের সংবাদ।
সোমবার জকিগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত ওয়েবিনারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে নতুন গ্যাসক্ষেত্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার এবং অনুসন্ধানের জন্য বাপেক্স আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাপেক্স এ পর্যন্ত ১৬টি অনুসন্ধান কূপ খনন করে ৭টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। আরও একটি বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক না হওয়ায় স্থগিত করা হয়েছে। বাপেক্স বর্তমানে স্থলভাগে এককভাবে অনুসন্ধানের কাজ করছে। বর্তমানে চাহিদার ৭০ শতাংশ গ্যাস দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে জোগান দেওয়া হয়। বাকি ৩০ শতাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। দেশীয় জোগানের ৫৫ শতাংশ বিদেশি কোম্পানি উৎপাদন করে; বাপেক্স করে ৪৫ শতাংশ।
গত এক বছরে বাপেক্সকে শক্তিশালী করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি একসঙ্গে অনেকগুলো প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। আগামী তিন বছরে অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানোরও পরিকল্পনা আছে তাদের। বাপেক্সের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। সেই সঙ্গে এ কথাও বলতে হবে যে যারা বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা বা তাদের কাছ থেকে কমিশন নিতে আগ্রহী, তারাই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের (বাংলাদেশে পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি) সামর্থ্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে বড় বাধা হিসেবে হাজির আছে।
সফলভাবে গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ করার পরও বাপেক্সকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। একটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করতে বিদেশি কোম্পানি যে অর্থ ব্যয় করে থাকে, বাপেক্স করে তার অর্ধেকে। উদাহরণ হিসেবে ভোলায় কূপ খননে রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রম ব্যয় করেছে ১৮০ কোটি টাকা। আর জকিগঞ্জে বাপেক্সের লেগেছে মাত্র ৭৮ কোটি কোটি টাকা; যদিও প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে কম ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিরল ঘটনা।
গত ১ মার্চ জকিগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্রে অনুসন্ধান কূপ খনন শুরু হয়। ৭ মে খননকাজ শেষ হয়। এতে চারটি স্তরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তিনটিতে গ্যাস পাওয়া যায়নি। একটি স্তরে বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনের মতো গ্যাস পাওয়া যায়। জকিগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের পর এখন সেখান থেকে দ্রুত গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ নিতে হবে। জকিগঞ্জ সীমান্তের ওপারে ভারতীয় ভূখণ্ডেও গ্যাসক্ষেত্র আছে। যারা আগে উৎপাদনে যাবে, তারাই বেশি গ্যাস পাবে।
ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক বদরূল ইমাম যথার্থই বলেছেন, বাপেক্সকে শক্তিশালী করা হলে কম খরচে গ্যাস উৎপাদন সম্ভব। তাই বাপেক্সের কাজের পরিধি আরও বাড়ানো উচিত। বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় একের পর এক গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাস উত্তোলনের দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ায় সরকারকে অনেক গচ্চা দিতে হয়েছে। বিদেশি কোম্পানি থেকে বেশি দামে গ্যাস কিনে সরকারকে কম দামে ভোক্তাদের দিতে হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। উত্তোলনের কাজটি বাপেক্স করলে বিদেশি কোম্পানিকে আর কমিশন দিতে হবে না।