পেট্রোবাংলার দেওয়া গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আমলে নেয়নি। তারা প্রস্তাবটি নাকচ করে দিয়েছে বিধিসম্মতভাবে তা উত্থাপিত না হওয়ায়। তবে ভবিষ্যতে বিধিসম্মতভাবে প্রস্তাব এলে তারা কী করবে, সেটি স্পষ্ট নয়।
পেট্রোবাংলা এবার বাসাবাড়িতে গ্যাসের দাম দ্বিগুণের বেশি করার প্রস্তাব দিয়েছিল। বর্তমানে বাসাবাড়িতে দুই চুলার গ্যাসের দাম নেওয়া হয় ৯৭৫ টাকা। সংস্থাটি সেটি বাড়িয়ে ২ হাজার ১০০ টাকার প্রস্তাব করে। এক চুলার দাম ৯২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছিল।
প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ করপোরেশন পেট্রোবাংলাকে চিঠি দিয়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে বলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এরপর ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি অভিন্ন প্রস্তাব তৈরি করে। আবাসিকে প্রিপেইড মিটার, শিল্প, সিএনজি, বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভে (শিল্পকারখানায় নিজস্ব উৎপাদিত বিদ্যুৎ) ব্যবহৃত গ্যাসের দামও দ্বিগুণের বেশি করার দাবি তাদের।
পেট্রোবাংলা তখনই গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে, যখন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্যাসের সংকট চলছে। গ্যাস না থাকায় অনেক বাসাবাড়িতে বিকল্প ব্যবস্থায় রান্নার কাজ চলছে। শিল্পকারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে গ্যাসের অভাবে। মহেশখালীতে ভাসমান দুটি এলএনজি টার্মিনালের একটি বন্ধ হয়ে আছে। বাকি একটি দিয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। আগামী এক মাসে এ সংকট কাটবে না বলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন।
একেই বলে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। সরকার মানুষকে গ্যাস দিতে পারছে না, আবার দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে। পেট্রোবাংলা বিশ্ববাজারে এলএনজির দামের ঊর্ধ্বগতিকে অজুহাত হিসেবে খাড়া করছে। কিন্তু দেশে নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হলেও উত্তোলনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এম শামসুল আলমের অভিযোগ, এলএনজি আমদানির সুযোগ থাকায় আমলারা গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দেননি। তেলের পর গ্যাসের দাম বাড়ালে মূল্যস্ফীতি বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। তাই খোলাবাজার থেকে না কিনে প্রয়োজনে রেশনিং করা উচিত।
এই প্রেক্ষাপটে আমরা মনে করি, গ্যাসের দাম না বাড়িয়েও দুটি উপায়ে সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। প্রথমত আমদানির ওপর নির্ভরশীল না হয়ে দেশের ভেতরে গ্যাস উত্তোলনের চেষ্টা জোরদার করা। দ্বিতীয়ত, গ্যাস খাতের চুরি ও অপচয় কমিয়ে এনে রাজস্ব বাড়ানো। গ্যাসের চুরি ও অপচয় বন্ধে সরকার বাসাবাড়িতে যে প্রিপেইড মিটার সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছিল, মাঝপথে তা কেন থেমে গেল? ঢাকা শহরে আনুমানিক মাত্র ১০ শতাংশ বাসাবাড়িতে প্রিপেইড মিটার সরবরাহ করা হয়েছে। এখনো ৯০ শতাংশ আগের নিয়মেই চলছে। সবখানে প্রিপেইড চালু হলে কেবল সরকারের রাজস্বই বাড়বে না, গ্রাহকদেরও সাশ্রয় হবে।
বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণে এমনিতে নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষ চাপে আছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অসহনীয় ধাক্কাও সামলাতে হচ্ছে তাদের। এখন গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে তার ভার বহন করা আরও কঠিন হবে। তাই সরকারের কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে, গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব থেকে সরে আসুন। দেশের জ্বালানি খাতকে স্বনির্ভর করতে কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ নিন।