বোরো ধানের খেতে পানি না দেওয়ায় গভীর নলকূপের সামনেই বিষপান করেন সাঁওতাল কৃষক অভিনাথ মারানডি ও তাঁর চাচাতো ভাই রবি মারানডি। এক দিনের ব্যবধানে তাঁদের দুজনেরই মৃত্যু হয়। পরিবারের দাবি, ১০ থেকে ১২ দিন অপেক্ষার পরও ধানের জমিতে পানি নিতে না পারার ক্ষোভ থেকে তাঁরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নিমঘটু গ্রামে এ দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে।
প্রথম আলোর খবরে জানা যায়, বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। সে জন্য বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ থেকে কৃষকদের পানি কিনে নিতে হয়। একজন অপারেটর পালাক্রমে কৃষকের জমিতে পানি দিয়ে থাকেন। গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউনিয়নের ঈশ্বরীপুর গ্রামের একটি গভীর নলকূপের অধীনে ২৬০ বিঘা জমিতে এবার বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। এ নলকূপের অধীনেই জমি বর্গা নিয়ে এবারে বোরো চাষ করেছিলেন অভিনাথ ও রবি।
স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, নলকূপের অপারেটর স্থানীয় ওয়ার্ড কৃষক লীগের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কৃষকদের জমিতে ঠিকমতো পানি না দিয়ে আশপাশে তাঁর আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতদের জমিতে পানি দেন। ঘটনার দিন অভিনাথ ও রবি তাঁর কাছে গিয়ে পানি না দিলে বিষ পান করার কথা বললেও কোনো গুরুত্ব দেননি তিনি। অভিনাথ ও রবির জমিতে পানি এসেছে ঠিকই, কিন্তু তাঁদের দুজনের আত্মহত্যার পর।
আদিবাসীবিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক ফজলে হোসেন বাদশা অভিযোগ করেছেন, পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়। এ নিপীড়ন গোটা গোদাগাড়ী ও তানোর এলাকার। এ ব্যাপারে তিনি সরকার, মানবাধিকার কমিশনসহ উচ্চপর্যায়ের তদন্তের দাবি করেছেন। সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী।’ অথচ সাঁওতালসহ দেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকজন নানা বৈষম্যের শিকার হন। প্রথম আলোর খবর থেকেই জানা যায়, এ ঘটনায় মামলা নিতেও গড়িমসি করেছে পুলিশ। পরে সাংসদের চাপে আত্মহত্যার প্ররোচনায় মামলা নিয়েছে তারা।
আদিবাসীবিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে বৈষম্যের ব্যাপারে যে উচ্চপর্যায়ের তদন্তের দাবি করেছেন, সেটা গুরুত্বের সঙ্গে সরকার ও মানবাধিকার কমিশনকে বিবেচনা করতে হবে। সাঁওতাল দুই কৃষকের আত্মহত্যার প্ররোচনার সঙ্গে জড়িত অপারেটরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। এ ঘটনায় বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের কারও অবহেলা থাকলে সেটাও তদন্ত করে বের করতে হবে। সাঁওতাল দুই কৃষকের পরিবারের পাশেও সরকারকে দাঁড়াতে হবে।