ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, কুমিল্লাসহ দেশের অনেক জেলায় গ্রামে গ্রামে সংঘর্ষ বাধার ঘটনা হরহামেশাই দেখতে পাই। তুচ্ছ বিষয় থেকে শুরু করে জায়গাজমি দখল ও প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ লেগেই থাকে। পাল্টাপাল্টি হামলায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। অনেক সময় বংশপরম্পরায় চল থাকে এসব বিরোধ। গত শনিবার কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় এক গ্রামে দুই পক্ষের মধ্যে প্রায় ৯০ বছরের বিরোধ মিটিয়ে অনন্য নজির দেখাল স্থানীয় প্রশাসন। দীর্ঘ প্রচেষ্টা ও বহুমুখী উদ্যোগের মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে সম্প্রীতির এ মেলবন্ধন ঘটানো সম্ভব হয়।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানায়, ছোটখাটো ঘটনা নিয়ে প্রায়ই টেঁটা, বল্লম ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ত উপজেলার শিদলাই গ্রামের দুটি পক্ষ। ১৯৩৩ সাল থেকে এ বিরোধ শুরু হয়। সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন, আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অনেকে। ঘরবাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা তো আছেই। এরপর ছিল পাল্টাপাল্টি মামলা। এসব মামলার কিছু আসামি কারাগারে আর কিছু পালিয়ে বেড়াতেন। বিরোধে না জড়াতে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নিয়েছে দুই পক্ষ। শিদলাই শান্তি পরিষদ কমিটি গঠন করার মাধ্যমে স্থানীয় এক কলেজমাঠে দুই পক্ষের সদস্যরা টেঁটা, বল্লম ও লাঠিসোঁটা জমা দিয়েছেন।
দীর্ঘমেয়াদি এ বিবাদ মেটানোর জন্য ব্রাহ্মণপাড়ার ইউএনও এবং থানার ওসির নেতৃত্বে শান্তি পরিষদের কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে যুক্ত করা হয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও। কয়েক মাস ধরে শিদলাই গ্রামের বড় দল ও ছোট দলের সঙ্গে পৃথক সভা করে পরিষদ। তাদের কাউন্সেলিং করে। রাজধানী ঢাকা থেকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এনে দুই পক্ষের লোকজনকে সচেতন করা হয়। কথায় কথায় মারামারি করার পেছনের খারাপ দিক তুলে ধরা হয়। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে শান্তিচুক্তি হয়। এটি শিদলাই শান্তি চুক্তিনামা বলে আখ্যায়িত করা হয়। চুক্তি অনুসারে এলাকার শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়মিত মনিটরিং ও দুই পক্ষের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে। পঙ্গুত্ব বরণ করা ১৭ ব্যক্তি ও নষ্ট হওয়া ৫৫টি ঘরের জন্য কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ নির্ধারিত হয়।
প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চাইলেই যেকোনো বিরোধ মেটাতে পারে তার একটি উদাহরণ এ ঘটনা। এলাকায় এলাকায় সম্প্রীতি বজায় রাখলে আইনশৃঙ্খলা ঠিক থাকে, অপরাধের মাত্রা কমে। বিরোধ-সংঘর্ষ না থাকলে হাসপাতাল ও থানায় দৌড়াদৌড়ির ভোগান্তি থেকে রেহাই পায় মানুষ। এলাকা এলাকায় গোষ্ঠীগত বিরোধ মেটাতে শিদলাই গ্রামের উদ্যোগ ছড়িয়ে দেওয়া হোক।