বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ নিয়ে বছরের পর বছর ধরে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন প্রভাবশালীরা। কিন্তু সাধারণ মানুষের বেলা আইনের ধারা দেখাতে দেরি করে না আমাদের বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষগুলো। শুধু তা–ই নয়, নিরপরাধ মানুষের নামে ভুল মামলা দিয়ে গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটে থাকে। টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) এমন ভুলে বারবার গ্রেপ্তার হচ্ছেন এক দিনমজুর। একে তো পিডিবির সেবা নিয়ে গ্রাহকের অভিযোগের শেষ নেই, সেখানে আবার তাদের ভুলের কারণে থানা-আদালতে দৌড়াদৌড়ি করে হয়রানির শিকার হচ্ছে মানুষ। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বহুরিয়া ইউনিয়নের কালমেঘা নাগেরচালা গ্রামে অনীল কোচ নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাড়িতে অবৈধ সংযোগের অভিযোগ আনে সখীপুর বিদ্যুৎ কার্যালয়। এ নিয়ে তাঁর নামে মামলাও করা হয়। কিন্তু সেই মামলায় গ্রেপ্তার করা হলো অনীলের ভাই সুনীল কোচকে, যাঁর বাড়ি কিনা দুই কিলোমিটার দূরে এবং সেখানে কোনো বিদ্যুৎ–সংযোগও ছিল না। গত সোমবার সুনীলকে টাঙ্গাইল আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে এই ভুল মামলায় ২০১৮ সালে পাঁচ দিন কারাভোগ করেছেন সুনীল।
পিডিবির ভাষ্য, অনীলের নামে মামলা করতে গিয়ে ভুলক্রমে তাঁর ছোট ভাই সুনীলের নাম উল্লেখ করা হয়। ২০১৮ সালেও সুনীলের গ্রেপ্তার নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে প্রথম আলো। এরপরেও চার বছর পর একই ঘটনা ঘটল। সুনীলের বড় ভাই অনীল বলেন, ‘২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে আমার ভাই গ্রেপ্তার হলে আমি বিদ্যুৎ বিভাগের ১৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে তাকে জামিনে মুক্ত করে আনি। আমার ও আমার ছোট ভাইয়ের বাড়িতে এখন পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ আছে। এখন তো আমার ছোট ভাইয়ের নামে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার কথা নয়। পিডিবি আমার ভাইকে বারবার হয়রানি করছে। পিডিবির বিরুদ্ধে আমরা মামলা করব।’
আদালতের মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান হলেও মামলা নিষ্পত্তি করার কথা ছিল পিডিবির। কিন্তু সেটি তারা না করে আবারও সুনীলকে গ্রেপ্তার করায়। এখানে পিডিবির গাফিলতি স্পষ্ট, সেই সঙ্গে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে করারও যথেষ্ট কারণ রয়েছে, নয়তো কেন তারা এমন আচরণ করবে। আমরা জানতে পারছি, সংবাদ প্রকাশের পর এবারও সুনীলের জামিনের ব্যবস্থা হয়েছে এবং প্রশাসন থেকে এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্রুত মামলাটি নিষ্পত্তি করা হোক। পিডিবির এ ধরনের ভুলের কারণে আরও মানুষ ভুক্তভোগী হয়েছেন বলে আমরা জানতে পারছি। এভাবে মানুষকে হয়রানি করার কোনো মানে হয় না।