দেশের কোনো শহরেই নদী–খালগুলো ভালো নেই। কোনোটি বেদখল হয়ে পুরোপুরি অস্তিত্বহীন হয়ে গেছে, কোনোটি মৃতপ্রায়, কোনোটি দূষণে বিপর্যস্ত। একটি নগরকে টিকিয়ে রাখতে একটি খালের গুরুত্ব কেউই বুঝতে চান না বা না বোঝার ভান করে থাকেন। খুলনা সিটি করপোরেশনের তালতলা খালের ক্ষেত্রেও কি সেটি ঘটছে না? ময়লা-আবর্জনায় প্রায় ভরাট হয়ে গেছে খালটি। পানির প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ। খালপাড়ে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে পাকা-আধা পাকা স্থাপনা। মৃতপ্রায় খালটি শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, দুই পাশে দখলবাজির কারণে সরু হয়ে গেছে তালতলা খাল। কয়েকটি গরুর খামারসহ অনেক অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে খালের ওপর। খালের মধ্যে বর্জ্য ফেলে সেসব আগুন দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে, ভাগাড়ের দুর্গন্ধে যেখানে দাঁড়ানোই দায়। কোনো অংশে জলজ আগাছার কারণে পানিই দেখা যায় না। ফলে মশার প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে এ খাল। অথচ এ খালে আগে বড় বড় নৌকা চলত। আশপাশের মানুষ খালে মাছ ধরত। একসময় খালের ওপর দিয়েই তৈরি হয় মহাসড়ক। তখন থেকে খালের দৈর্ঘ্য কমে গেছে। খালের পাশে যে রাস্তা হয়েছে, সেটাও খালের মধ্যে ছিল। একসময়ের বড় খালটির অনেক জায়গা এখন নালায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, দখলমুক্ত করে বড় ধরনের খননকাজ না চালালে অচিরেই খালটির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। খালটি খনন করা হলে বয়রা, ছোট বয়রা, করিমনগর এলাকায় জলাবদ্ধতা থাকত না।
তালতলা খাল নিয়ে সিটি করপোরেশনের দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতা স্পষ্ট। তবে তারা বলছে, সপ্তাহখানেকের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য মাইকিং করা হবে। শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার উন্নয়নে ৮২৩ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলছে। ওই প্রকল্পের আওতায় দুই পাশে পার্শ্বদেয়াল করে খালটা খনন করা হবে। দুই পাশে ওয়াকওয়ে থাকবে। তবে এক দশক আগেও একবার খালটির সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছিল। ২০১৫ সালের দিকে খননও করা হয়। তবে যেনতেন সেই খননে কোনো উপকার মেলেনি। বরং ক্ষতিই হয়েছে খালের। খাল খননের পর মাটি খালের পাশেই রাখা হয়েছিল, পরে সেই মাটির ওপর দিয়ে সিটি করপোরেশন রাস্তা তৈরি করে খালটির প্রস্থ কমিয়ে দেয়। ফলে খাল পুনরুদ্ধারে নতুন প্রকল্পে আদৌ কোনো সুফল আসবে কি না, তা নিয়ে নগরবাসী সন্দিহান। প্রকল্পের জন্য অপেক্ষায় না থেকে দ্রুত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হোক। সিটি করপোরেশনের নিয়মিত কার্যক্রমে খালটিকে গুরুত্ব দেওয়া হোক।