এক ঘণ্টা পেরিয়ে দুই মিনিট হলেই চার্জ লাগবে দুই ঘণ্টার। গাড়ি পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রায় সবখানেই আছে। কিন্তু এ নিয়ম যদি হাসপাতাল বা ক্লিনিকের ক্ষেত্রে হয়, সেটা মেনে নেওয়া কঠিন। কিন্তু অনেক ক্লিনিকে সেই অনিয়মও নিয়ম হয়ে আছে। হোটেলের মতো চেক ইন এবং চেক আউটের সময় বেঁধে চলছে স্বাস্থ্যসেবা।

কোনো কোনো বেসরকারি হাসপাতালে শুধু অপারেশন থিয়েটারের চার্জ ২০ হাজার টাকা প্রতি ঘণ্টা। এর সঙ্গে সার্জন, অ্যানেসথেটিস্ট, কার্ডিওলজিস্ট বা অন্য ডাক্তারের ফি, ওষুধ-ইনজেকশন-সরঞ্জামের দাম তো আছেই। নিট ফল? দেখা যাচ্ছে সামান্য ফোড়া কাটানোর খরচও ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

একেক হাসপাতালের চার্জ ধরা হচ্ছে একেক রকম। এ-সংক্রান্ত কোনো সরকারি দিকনির্দেশনা নেই। এর সুযোগ নিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো ইচ্ছেমতো সেবামূল্য নির্ধারণ করছে। সেবামূল্যের কোনো তালিকা দৃশ্যমান না থাকায় বেশির ভাগ সময়ে রোগীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। ঠকছেন। এ নিয়ে শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটির মতো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।

এটা স্বস্তির বিষয় যে এ অবস্থার অবসানের একটি পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে। উচ্চ আদালত এক আদেশে বলেছেন, সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ল্যাবরেটরি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসাসংক্রান্ত সব পরীক্ষা ও সেবার মূল্যতালিকা উন্মুক্তভাবে প্রদর্শন করতে হবে। এ আদেশ ১৫ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে নির্দেশও দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া ৬০ দিনের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের করণীয়–সংক্রান্ত একটি নীতিমালা তৈরি এবং তা বাস্তবায়নের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতেও বলেছেন আদালত।

আদালতের এ আদেশ বাস্তবায়িত হলে অনেক বিভ্রান্তির অবসান হবে। তালিকা দেখেই রোগীরা তাঁদের সম্ভাব্য খরচ বুঝে নিতে পারবেন। এতে সেবাদাতা ও গ্রহীতা উভয় পক্ষেরই লাভ হবে। আদালতের নির্দেশমতো বিশেষজ্ঞ কমিটি একটি নীতিমালা তৈরি করলে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ইচ্ছেমতো খরচ নির্ধারণ করতে পারবে না। নীতিমালা অনুসারেই সব করতে হবে। অর্থাৎ এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি বাড়বে। বাংলাদেশের বাস্তবতা হলো, আদালতের আদেশ কিংবা নীতিমালা সর্বাংশে অনুসরণ করা হয় না। কিন্তু আদালতের এ আদেশ যে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের একটি সুশৃঙ্খল কাঠামো দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে থাকবে, তা বলাই যায়।

আদালতের এই আদেশে রাতারাতি দেশের সব সেবা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক নীতি বদলে যাবে, সেটি মনে করার কারণ নেই। তবে এর মাধ্যমে যে শুভসূচনা হলো, তার ধারাবাহিকতা নিশ্চয়ই কল্যাণ বয়ে আনবে।