আমাদের শহরগুলো অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ফলে সেখানে কোনো সড়ক নির্মাণ বা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য জায়গা পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। জমি অধিগ্রহণ করতে গেলেও নানা মামলা-মোকদ্দমায় পড়তে হয় সরকারি কর্তৃপক্ষগুলোকে।
দীর্ঘদিন ধরে সেসব কাজ আটকে থাকে। এ ছাড়া এর পেছনে বিশাল বরাদ্দ, সেটিকে ঘিরে অনিয়ম তো থাকেই। সেদিক দিয়ে মৌলভীবাজার পৌরসভার একটি এলাকার মানুষের উদারতা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। নিজেদের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে সড়কের জন্য জায়গা করে দিয়েছেন এলাকাবাসী। এ ঘটনায় সেখানকার মানুষ প্রশংসিত হচ্ছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, পৌরসভার ফাটাবিল এলাকার টিবি হাসপাতাল সড়কের সংকুচিত লিংক রোডটিতে এত দিন রিকশা নিয়েও স্বচ্ছন্দে চলাচল করা যেত না; কোনো অ্যাম্বুলেন্স বা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি তো দূরের কথা। বছর দুয়েক আগে এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সবার সামনে একটি বাসা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কারও কিছু করার সুযোগ ছিল না।
তখন থেকে স্থানীয় লোকজন সড়ক বড় করার উদ্যোগ নেন। শুরুতে যঁারা আপত্তি করেছিলেন, তঁারাও আর বাধা হয়ে থাকেননি। প্রায় ৩০টি বাড়ির মালিক স্বেচ্ছায় নিজেদের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে রাস্তার জন্য জায়গা করে দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার থেকে পৌরসভার উদ্যোগে এক্সকাভেটর ও শ্রমিক দিয়ে সীমানাপ্রাচীর ভেঙে সড়ক প্রশস্ত করার কাজ শুরু হয়েছে।
এলাকার বাসিন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পূর্ণা ভৌমিক বলেন, ‘আমরা সব সময় আতঙ্কে থাকি। কেউ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুলেন্স আনা-নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। আগুন লাগলে এই গলি দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকানো যায় না। সেই আশঙ্কা ও দুর্ভোগ এখন লাঘব হবে। যাঁরা নিজ দেয়াল ভেঙে জনহিতকর কাজ করেছেন, তাঁরা মহানুভবতা দেখিয়েছেন।
তাঁদের সবার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা।’ এ কাজের সঙ্গে যুক্ত পৌর মেয়র মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘রাস্তা বড় করার জন্য দুই বছর ধরে আমরা আলাপ-আলোচনা করে আসছি। এখন ৭০০ মিটার দীর্ঘ রাস্তাটি ১৪ ফুট প্রশস্ত করা হচ্ছে। দুই মাসের মধ্যে আশা করছি কাজ শেষ হয়ে যাবে।’
পরের জায়গা পরের জমি/ ঘর বানাইয়া আমি রই/ আমি তো সেই ঘরের মালিক নই—এমন অনেক গান আমাদের সমাজে প্রচলিত থাকলেও জায়গাজমি নিয়ে বিরোধই আমরা বেশি দেখি। সেখানে একচিলতে জায়গাও কেউ ছাড় দিতে রাজি হয় না কেউ। এ নিয়ে বছরের পর বছর ধরে আইনি ঝামেলাও চলতে থাকে। সেখানে মৌলভীবাজার পৌরসভার এসব মানুষ নিঃসন্দেহে বড় দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন। তঁাদের প্রতি আমাদের অভিবাদন।