যশোরে ২৪৪ প্রকল্পে নয়ছয়

সম্পাদকীয়

উন্নয়নের নামে অর্থ লোপাটের ঘটনা রীতিমতো ডালভাত হয়ে গেছে এ দেশে। রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত এলাকার ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত যেমন উন্নয়ন প্রকল্পের শেষ নেই, তেমনি দুর্নীতি ও অনিয়মেরও সীমা নেই। কোথাও স্থানীয় প্রশাসন, আবার কোথাও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বপ্রাপ্তরা প্রকল্পের বরাদ্দ লোপাট করে দিচ্ছেন। তেমনি এক ভয়াবহ উদাহরণ দেখা গেল যশোরের অভয়নগরে। উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ২৪৪টি প্রকল্পে কোথাও নামমাত্র কাজ করে, কোথাও কাজ না করেই টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এতগুলো প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে উপজেলাটির বিশাল জনগোষ্ঠী এর সুফলভোগী হতো, অনিয়মের কারণে এর থেকে বঞ্চিত হলো তারা।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে আটটি ইউনিয়নে প্রকল্পগুলোতে মোট বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। সব কাজ শেষের সময়সীমা ছিল ৩০ জুন। এর মধ্যে দেখা গেছে, প্রেমবাগ ইউনিয়নে একটি শ্মশানে মাটি ভরাটের নামে বরাদ্দের ১০ লক্ষাধিক টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। সেখানে কাজ হয়েছে কি না, জানেনই না প্রকল্পের সভাপতি সেখানকার ইউপি সদস্য। নওয়াপাড়া পৌরসভার আমডাঙ্গা গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২২টি ঘরে ভিত্তি ভরাটের নামেও ১৪ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। অথচ আগেই ঘরগুলো পুরোপুরি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে ভূমিহীনদের কাছে, তাঁরা সেখানে বসবাসও করছেন। সেখানে ভিত্তি ভরাটের কোনো প্রশ্নই আসে না।

একইভাবে সুন্দলী ইউনিয়নে সুন্দলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, সুন্দলী এস টি স্কুল অ্যান্ড কলেজে মাটি ভরাটের নামে লাখ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প সভাপতিরা বলছেন, ঠিকঠাকমতো কাজ হয়েছে। বাস্তবে তার কিছুই দেখা যায়নি বা নামকাওয়াস্তে হয়েছে। বাঘুটিয়া ও সিদ্দিপাশা ইউনিয়নেও কয়েকটি রাস্তা সংস্কারের নামে লাখ লাখ টাকা লোপাট করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এসব প্রকল্প কাজের দায়িত্বে ছিলেন। সুফলভোগীরাও অর্থ লোপাটের বিষয়টি জানেন না, তাঁদের অগোচরে তুলে নেওয়া হয়েছে বিপুল পরিমাণ বরাদ্দের অর্থ। তবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মুহাম্মদ রিজিবুল ইসলামের দাবি, সব প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে। কাজ যাচাই-বাছাই করার পর বিল দেওয়া হয়েছে। যদিও অনিয়মের জন্য তার বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগসাজশে প্রকল্প কাজগুলো তিনি নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। তঁাদের চাপে ইউএনওসহ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা কোণঠাসা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি আমরা বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অভয়নগরে এসব অনিয়ম নিয়ে তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।