শিক্ষার্থীদের টিকা নিবন্ধন

সম্পাদকীয়

করোনার টিকা নিয়ে দীর্ঘ অনিশ্চয়তার পর কিঞ্চিৎ সুসংবাদ পাওয়া গেছে। ১ জুলাই থেকে নতুন করে টিকা কর্মসূচি শুরু করেছে সরকার। এরই মধ্যে সিনোফার্মের ২০ লাখ ডোজ টিকা ও মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ টিকা এসে পৌঁছেছে কিংবা পথে পথে রয়েছে। টিকা দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে নতুন করে নিবন্ধনকাজও শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবাসী শ্রমিক ও শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পাবেন। প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে টিকা দেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় তাঁরা বিদেশের চাকরিস্থলে যেতে পারবেন না।

গত মার্চ মাসে যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তখন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছিলেন, টিকা দেওয়ার পরই শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যাবেন, যাতে সংক্রমণের ঝুঁকি না থাকে। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থীর এনআইডি নেই, নানা কারণে করতে পারেননি।

এই প্রেক্ষাপটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের টিকা নেওয়ার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজে সহায়তার যে উদ্যোগ নিয়েছে, আমরা তাকে স্বাগত জানাই। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাসের টিকা নিতে এনআইডি লাগবে। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁদের এনআইডি নেই, তাঁদের দ্রুত সংগ্রহ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ জন্য https://ssl.du.ac.bd/studentlogin লিংকে গিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল আইডি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীকে তাঁর ড্যাশবোর্ড লগইন করার মাধ্যমে ৬ জুলাইয়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে। এ সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের তালিকা নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। নির্বাচন কমিশন থেকে তালিকা অনুমোদনের পর শিক্ষার্থীকে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে ই-মেইল করে জানানো হবে। এর আগে মার্চ মাসেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা নিতে নিবন্ধনপ্রক্রিয়া শুরু করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

তবে এনআইডির সমস্যাটি কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমিত নয়। অন্যান্য পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সব কলেজ কর্তৃপক্ষেরও এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। আইনানুযায়ী ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সব নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার কথা। কিন্তু নানা কারণে অনেকে সংগ্রহ করেননি। আবার নির্বাচন কমিশনকেও জাতীয় নির্বাচনের আগে ছাড়া এ ব্যাপারে তৎপর হতে দেখা যায় না। অর্থাৎ গাফিলতি দুদিক থেকেই আছে। দেশে লাখ লাখ শিক্ষার্থী আছেন, যাঁদের বয়স ১৮ বছরের ওপরে, তাঁদের টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনতে হলে এনআইডি পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, দেশের সব বয়স্ক নাগরিককে টিকা কর্মসূচির আওতায় আনা হবে। টিকার জন্য টাকার কোনো সমস্যা হবে না।

দেশবাসীর সঙ্গে আমরাও আশা করতে চাই যে করোনার বর্তমান ঢেউ শিগগিরই কমে যাবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও যথাসময়ে খুলে দেওয়া হবে। তখন যাতে টিকা না নেওয়ার কারণে কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে না থাকেন, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের এনআইডি কার্ড করার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে উদ্যোগ নিয়েছে, অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও তা অনুসরণ করুক। শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদেরও দায়িত্ব আছে।