শিক্ষার্থীদের নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড

উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানে তুঘলকি কাণ্ড চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করেছে, অথচ ছাত্রাবাস বা হল বন্ধ রেখেছে। এ কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বেড়েছে। তাঁরা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। কর্তৃপক্ষ তথা সরকারের এ স্ববিরোধী নীতি শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।

করোনার সংক্রমণের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। এরপর সরকার অনলাইনে পাঠদান কর্মসূচি চালু করলেও সব শিক্ষার্থী সেই সুযোগ পাননি। বিশেষ করে যেসব এলাকায় অনলাইন সুবিধা নেই, সেসব এলাকার শিক্ষার্থীরা বঞ্চিতই থেকেছেন। অনেক শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে শহর এলাকা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে মেস ভাড়া করে আছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, কর্তৃপক্ষ যখন সশরীর শ্রেণিকক্ষে পরীক্ষা নিচ্ছে, তখন ছাত্রাবাসও খুলে দিতে হবে। তাঁদের এ দাবি যৌক্তিক। সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গত দুদিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশালসহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হল খোলার দাবিতে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিকেট খেলা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আশপাশের গ্রামবাসীর সংঘাতের সূচনা হলেও পরবর্তী সময়ে তা হল খুলে দেওয়ার আন্দোলনে রূপ নেয়। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পর থেকে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী আশপাশের গ্রামে মেস ভাড়া করে থাকতেন অনলাইনে ক্লাসে অংশ নেওয়ার সুবিধার জন্য। এর আগে শিক্ষার্থীরা কয়েকবার হল খুলে দেওয়ার দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি। গত বৃহস্পতিবার হল খুলে দেওয়ার দাবিতে শনিবার তাঁরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। কিন্তু উপাচার্য ফারজানা ইসলাম তাঁদের সঙ্গে দেখা করে সান্ত্বনা দেওয়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন বলেছেন, ‘হল খোলার বিষয়টি আসলে আমাদের হাতে নেই। সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত এলে হল খোলা হবে।’ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ যুক্তি শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করতে পারেনি। এরপর শিক্ষার্থীরা তালা ভেঙে ছেলেদের আটটি হলের দখল নিয়েছেন। মেয়েদের সংখ্যা কম থাকায় তাঁরা হলে থাকার সাহস পাননি। এর আগে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতেও একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। দূরদূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে এসে দেখেন হল বন্ধ। বাধ্য হয়ে তাঁরা দুদিন মাঠে রাত যাপন করেন। প্রথম আলোয় এ খবর ও সম্পাদকীয় ছাপা হওয়ার পর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্রাবাস খুলে দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার সুবিধার জন্য ১৮ মার্চ থেকে হল খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আমরা মনে করি, শিক্ষা কার্যক্রম চললে সব উচ্চশিক্ষালয়ের আবাসিক হল খুলে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। বিশেষ করে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ যদি শিক্ষার্থীদের সশরীর পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, শিক্ষার্থীদের হলও খুলে দিতে কোনো বাধা থাকার কথা নয়। প্রয়োজনে ছাত্রাবাসে ঢোকার আগে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হোক। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ থাকতে পারে না।

হল খোলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারের অনুমতির দোহাই দিচ্ছে। সেই অনুমতি নেওয়ার দায়িত্বও তাদের, শিক্ষার্থীদের নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বৈঠক করে হল খোলার সিদ্ধান্ত নিতে পারলে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন পারবে না?