সম্পাদকীয়

নদীতে কাটা হয়েছে পুকুর, ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে পাকা বাড়ি, তলদেশে চলছে ধান চাষ, লাগানো হয়েছে বড় বড় গাছ—এভাবেই একসময়কার প্রমত্তা নদী চিত্রা প্রাণ হারাতে বসেছে প্রভাবশালী দখলদারদের হাতে। নদীর পাড় ও তলদেশ দখল করে তাঁরা দিব্যি সেটাকে নিজেদের সম্পত্তি বলে দাবি করে বসেছেন। ঝিনাইদহ জেলায় চিত্রার যে অংশ পড়েছে, সেখানে দখলদারদের সংখ্যা অনেক হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তালিকায় স্থান পেয়েছে মাত্র আটটি পুকুর।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, জেলার কোটচাঁদপুরের তালসার থেকে কালীগঞ্জের শালিখা পর্যন্ত নদীর দুই পাড়ে কাটা হয়েছে অসংখ্য পুকুর। সেখানে মাছ চাষ করা হচ্ছে। কালীগঞ্জ শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে সেতুসংলগ্ন পাকা ভবন নির্মাণ শুরু হয়েছিল। আপাতত নির্মাণকাজ বন্ধ আছে। এর পশ্চিমে শিবনগর গ্রামের মুক্তার হোসেন নদীর জায়গায় পাকা ঘর তৈরি করেছেন। মুক্তার হোসেনের দাবি, এটা তাঁরই জায়গা। শহরের মধ্যে থাকা সেতুটির (পুরোনো ব্রিজ) দুই পাশে মার্কেট গড়ে উঠেছে। সেতুর পশ্চিমে নদীর দুই পাড়ে বড় বড় পাকা ভবন বানানো হয়েছে। এখানে নদীটি খালে পরিণত হয়েছে। সেতুর পূর্ব পাশেও দুই পারে অসংখ্য পাকা ভবন।

চিত্রা নদীতে একসময় লঞ্চ-স্টিমার চলত। ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহনে ব্যবহার করা হতো। নদীর ঘাটকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে কালীগঞ্জ শহর। নদীর পারে আরও গড়ে উঠেছে গান্না, চাপরাইল, মঙ্গলপোতাসহ বেশ কয়েকটি ছোট বাজার। অথচ নদীটি দখল হয়ে অনেক স্থানে এখন সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ভূমি কার্যালয়ের কাগজপত্র বলছে, নদীর প্রশস্ততা ১০০ থেকে ১৫০ ফুট। কিন্তু বাস্তবে কোথাও ৩০-৪০ ফুটের বেশি নেই।

দখলদারদের হাত থেকে চিত্রা নদীকে বাঁচাতে আন্দোলন করছে ‘চিত্রা বাঁচাও আন্দোলন’। এর আহ্বায়ক শিবুপদ বিশ্বাস অভিযোগ করেন, চিত্রায় অসংখ্য পুকুর আর ভবন থাকলেও সরকারের দখলের তালিকায় এসেছে মাত্র আটটি পুকুর। নদী দখলের প্রক্রিয়া সম্পর্কে একটা ধারণা তাঁর বক্তব্যে পাওয়া যায়। শুষ্ক মৌসুমে নদীর তলদেশে ধান চাষ করা হয়, পরে গাছ লাগিয়ে সেই স্থান নিজেদের বলে দাবি করা হয়।

জেলা প্রশাসন চিত্রা নদী দখলমুক্ত করতে দ্রুত অভিযানে নামার কথা বলেছে। কিন্তু পাউবোর তালিকা ধরে অভিযান চালালে চিত্রাকে বাঁচানো সম্ভব নয়। দখল হয়ে যাওয়া সব জায়গা চিহ্নিত করে ও দখলদারদের তালিকা তৈরি করে নদী দখলমুক্ত করতে হবে। চিত্রা নদীকে বাঁচাতে দখলদারদের বিরুদ্ধে দ্রুত শূন্য সহিষ্ণুতা নীতির প্রয়োগ আবশ্যক।