শিল্পায়নের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দুই কারণেই কয়েক দশক ধরে মানুষ শহরমুখী। তাই প্রতিনিয়ত কমছে কৃষিকাজের লোক। ফসল কাটার সময় শ্রমিকসংকট এখন তাই প্রতিবছরের ঘটনা। সামনে এ সংকট আরও বাড়বে বৈ কমবে না। এ সমস্যার একটা সমাধান হতে পারত কৃষি যান্ত্রিকীকরণ। আধুনিক কৃষি যন্ত্রগুলো অল্প সময়ে অনেক বেশি কাজ করে। আর এগুলো চালনার জন্য লোকও লাগে অতি অল্প। কিন্তু যান্ত্রিকীকরণের জন্য দরকার যৌথ খামার বা সমবায়ী কৃষিব্যবস্থা। বাংলাদেশের খেতগুলো ছোট ছোট। নানা কারণে আমাদের দেশের কৃষকেরা এগুলো জোড়া লাগানোর ব্যাপারেও খুব একটা উৎসাহী নন। যান্ত্রিকীকরণের আরেকটি অন্তরায় সব কৃষক একই সময়ে চাষাবাদ করেন না। সবার বীজতলা একসময় গজায় না, স্বভাবতই তাই চারা রোপণের সময়ও হয় ভিন্ন, ধানও তাই একসময়ে পাকে না। একই কাজের জন্য বিভিন্ন জমিতে আলাদা সময়ে কৃষি যন্ত্রগুলোর ব্যবহার তাই অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী হয় না। বাংলাদেশের কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের সিকি ভাগও তাই হয়নি। কোনো একটি এলাকার কোনো একটি কৃষিপণ্য চাষের পুরো প্রক্রিয়াকে যদি একই সিস্টেমের আওতায় নিয়ে আসা যেত, তাহলে কিন্তু জমির আল বজায় রেখেও লাভজনকভাবে যন্ত্র ব্যবহার করা যেত। বোরো চাষে এ রকমেরই একটা কার্যকরী উপায় বের করেছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা। পদ্ধতিটির নাম দিয়েছেন তাঁরা সমলয়।

নতুন এ পদ্ধতিতে বীজতলা থেকে ফসল কাটা, সবই এক সময়ে একযোগে করা হবে। স্বল্প মানুষের সাহায্যে কাজটা করবে যন্ত্র। জমির অপচয় রোধে এ পদ্ধতিতে প্রচলিত রীতিতে বীজতলা তৈরি না করে প্লাস্টিকের ফ্রেম বা ট্রেতে লাগানো হবে ধানের বীজ। ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে চারা হবে। তারপর রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টারের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণ করা হবে। একটা ট্রান্সপ্ল্যান্টার এক ঘণ্টায় এক একর জমিতে চারা লাগাতে পারে, বেঁচে যায় সাড়ে চার হাজার টাকা। চারা একই গভীরতায় সমানভাবে লাগানো যায়। একই সময় রোপণ করায় নির্দিষ্ট এলাকায় সব ধান পাকেও একই সময়। মেশিন দিয়ে একই সঙ্গে সব ধান কাটা ও মাড়াই করা যাবে। আর বড়সড় পরিসরে হবে বলে সব প্রক্রিয়াতেই যন্ত্রের ব্যবহার হবে সাশ্রয়ী।

চলতি মৌসুমে ৬১টি জেলার নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় একযোগে সমলয় চাষ চলছে। এ পদ্ধতি সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া গেলে উৎপাদন বাড়বে। তার চেয়ে বড় কথা, শ্রমিক কম লাগবে বলে প্রতিবছরই কৃষি খাতে যে শ্রমিক সংকট হয়, তা–ও কাটবে।