সামাজিক অনুষ্ঠানে হাতাহাতি

যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রায় সব দেশে বাংলাদেশিরা আছেন। এই প্রবাসীদের অনেকেই নিজ নিজ প্রতিভা ও যোগ্যতা দিয়ে নিজেদের মেলে ধরছেন। পাশাপাশি তাঁদের কাজ দিয়ে তাঁরা বিশ্বের সামনে নিজের দেশকে তুলে ধরছেন। তবে বিদেশের মাটিতে কারও কারও অনভিপ্রেত আচরণ দেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করে। যেহেতু বিদেশে প্রবাসীরা দেশের সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করেন, সেহেতু তাঁদের আচরণ দেখেই বিদেশিরা বাংলাদেশের সামগ্রিক সংস্কৃতি সম্পর্কে সাধারণ ধারণা পান।

বলা বাহুল্য হলেও উল্লেখ করা দরকার, অনেক ক্ষেত্রেই শোভনীয় আচরণ দেখাতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যর্থ হন। বিশেষ করে প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিদের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মাঝে মাঝে এমন সব অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে, যা বিদেশি সমাজে দেশের ভাবমূর্তিকে ভূলুণ্ঠিত করে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ‘জ্যাকসন হাইটস এলাকাবাসী’ নামের একটি সংগঠন আয়োজিত অনুষ্ঠানে দফায় দফায় হাতাহাতি-মারামারির ঘটনা গোটা জাতিকে লজ্জায় ফেলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ৪ আগস্ট সেখানে বারবিকিউ পার্টিতে কয়েক দফা হাতাহাতি হয়েছে। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে পুলিশও আসে। তবে এই ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।

বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চলা ওই অনুষ্ঠানে অন্তত পাঁচবার হাতাহাতি হয়। প্রতিটি ঘটনা ছিল ‍তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে। লাইন ভেঙে একজন খাবার নিতে চাইলে অন্যজন বাধা দেওয়ায় মারামারির সূত্রপাত হয়। একজনের সঙ্গে আরেকজনের তর্কাতর্কি ও গালিগালাজকে কেন্দ্র করে আরেকবার হাতাহাতি হয়। অন্য তিনটি ঝগড়ার ঘটনার দুটিই খাবার বণ্টনকেন্দ্রিক। অপরটি ‘সিনিয়র-জুনিয়র’-সংক্রান্ত। অর্থাৎ বয়সে ছোট একজন বয়সে বড় অন্যজনকে নাম ধরে ডাকলে তঁাদের মধ্যে তর্কাতর্কি ও হাতাহাতি হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের ঘটনা এবারই প্রথম ঘটল, তা নয়। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দ্বন্দ্ব বা মারামারির কথা প্রায়ই শোনা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে উন্নত শৃঙ্খলা পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা রয়েছে। সেখানকার অধিবাসীদের আইন মেনে চলতে হয়। সেখানে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে কে কার আগে লাইনে দাঁড়াবে, তা নিয়ে মারামারি যারপরনাই লজ্জাকর। লাইনে দাঁড়িয়ে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে খাবার সংগ্রহ করা খুব সাধারণ শিষ্টাচার। এই সাধারণ শৃঙ্খলাজ্ঞান অর্জনে উচ্চশিক্ষিত হওয়ার দরকার হয় না।

অন্তত দেশের ভাবমূর্তির স্বার্থে এই শৃঙ্খলা ও ভব্যতাবোধ থাকা জরুরি। বাংলাদেশিদের আচরণ শোভনীয় নয়—বিদেশের মাটিতে এমন একটি ভাষ্য যাতে প্রতিষ্ঠা না পায়, অন্তত সেই বিবেচনা থেকে এই ধরনের অশোভন আচরণ থেকে প্রবাসীদের বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়।