সেতু যখন নদের ‘গলার কাঁটা’

সম্পাদকীয়

অপরিকল্পিত উন্নয়ন চলছেই একের পর এক। সেই সঙ্গে আছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি। যার ফলে কোনোভাবেই টেকসই হচ্ছে না এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। পরে সেসব স্থাপনা ভেঙে নতুনভাবে করতে হচ্ছে। জনগণের অর্থের এমন অপচয় রীতিমতো বিস্ময়কর। যশোর শহরে ভৈরব নদকে বাধাগ্রস্ত করে নির্মাণ করা একটি সেতুও অপসারণ করতে চায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। অথচ সেতুটি নির্মাণের সময় বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করা হলেও গ্রাহ্য করা হয়নি। শুধু তা–ই নয়, বিভিন্ন সময় নদটির ওপর তৈরি হয়েছে ৫১টি সেতু-কালভার্ট। অপরিকল্পিতভাবে একটার পর একটা স্থাপনা তৈরি করে নদটিকে মেরে ফেলার যাবতীয় আয়োজনই করা হয়েছে যেন।

গত বৃহস্পতিবারের প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, যশোর শহরের বাবলাতলা এলাকায় ভৈরব নদের ওপর সেতুটি নির্মাণ করতে খরচ হয় পৌনে পাঁচ কোটি টাকা। ২২০ ফুট চওড়া নদের দুই তীর সংকুচিত করে ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। পাঁচ বছর পর সেতুটি অপসারণের জন্য পাউবো সুপারিশ করে চিঠি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। অথচ নির্মাণের সময় ২০১৪ সালে প্রথম আলো দুবার প্রতিবেদন প্রকাশ করে, অপরিকল্পিতভাবে সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। তারপরও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের টনক নড়েনি। জনগণের টাকা নষ্ট করা যেন তাঁদের কাছে কোনো ব্যাপারই নয়।

কোনো সমন্বয় ছাড়া সরকারের দপ্তরগুলো একের পর এক সেতু-কালভার্ট বানিয়ে গেল। যার খেসারত দিতে হচ্ছে এখন। কোনো ধরনের যাচাই–বাছাই করা ছাড়াই এভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন একধরনের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।

ভৈরব নদের ওপর বিভিন্ন সময় সাড়ে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে আরও তিনটি অপরিকল্পিত সেতু নির্মাণ করেছে সওজ। এমন আরও ৪৭টি অপরিকল্পিত সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করেছে সরকারের ছয়টি দপ্তর। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ২৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের কাজ চলছে। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ। তবে সেতুগুলো অপসারণ না করলে নদ খননের সফলতা আসবে না বলে সেতুসংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে চিঠি দিয়েছে পাউবো। যাতে বলা হয়, ভৈরব নদের খননকাজ সম্পন্ন করলেও নাতিদীর্ঘ এসব সেতুর কারণে কাঙ্ক্ষিত সুফল অর্জন ব্যাহত হবে।

কোনো সমন্বয় ছাড়া সরকারের দপ্তরগুলো একের পর এক সেতু-কালভার্ট বানিয়ে গেল। যার খেসারত দিতে হচ্ছে এখন। কোনো ধরনের যাচাই–বাছাই করা ছাড়াই এভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন একধরনের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। আমরাও এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। একটি দেশের উন্নয়নের জন্য এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে। অপরিকল্পিত উন্নয়ন থেকে ভৈরব নদকে রেহাই দেওয়া হোক।