স্কুলের মাঠে পাথর ভাঙা

সম্পাদকীয়

দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির কাছে দিন দিন অসহায় হয়ে পড়ছে সমাজের মানুষ। ক্ষমতাধরদের দাপটে মানুষ কী রকম কোণঠাসা হয়ে পড়ে, তারই নমুনা দেখা গেল ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলায়। সেখানে রাজনীতির প্রভাব খাটিয়ে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লাগোয়া মাঠে দিনরাত পাথর ভাঙা হচ্ছে। শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী এ পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের শিকার। বিশ্বে এমন কোন রাষ্ট্র বা প্রশাসন আছে, যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে এমন গর্হিত কর্মকাণ্ড করার সুযোগ দেয়? বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, তারাকান্দার তালদিঘী বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের খেলার মাঠে চলছে পরিবেশবিধ্বংসী এই যজ্ঞ। পাশেই একই নামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কের সংস্কারকাজ করছে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। খেলার মাঠটি ভাড়া নিয়ে এক বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবহার করছে তারা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাঠটি ভাড়া নিয়ে চারদিকে টিনের সীমানাপ্রাচীর দিয়েছে। প্রাচীরের ভেতর ভবন করে সেখানে অফিস করেছে। তারাকান্দার সবচেয়ে বড় খেলার মাঠ এটি। উপজেলার বড় বড় খেলার আয়োজন এ মাঠে হতো। এখন পাথরের বিশাল সব স্তূপের নিচে চাপা পড়েছে মাঠটি। দিনরাত মিলিয়ে প্রায় ১৮ ঘণ্টা পাথর ভাঙার কাজ চলে সেখানে। ধুলার মতো উড়ে আসা পাথরের গুঁড়া আর পাথরভাঙা কলের বিকট আওয়াজে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। শ্বাসকষ্টজনিত রোগের আশঙ্কা তো আছেই। দুর্ভোগে পড়ে এলাকাবাসীর নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

রাজনৈতিক চাপের কারণে স্কুল কর্তৃপক্ষই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিটেডের কাছে মাঠটি ভাড়া দিয়েছে। বর্ষাকালে পানির কারণে জায়গার অভাব ও করোনাকালে স্কুল বন্ধের দোহাই দিয়ে দুই দফায় মাঠ ভাড়া নেয় প্রতিষ্ঠানটি। চুক্তি অনুযায়ী আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত পাথর ভাঙার কাজ চলবে। এর মধ্যে ভারী ভারী যন্ত্র আনা–নেওয়া ও পাথরবোঝাই ট্রাকে স্কুলের মাঠ থেকে মহাসড়ক পর্যন্ত সড়কটি ভেঙে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে চলছে পাথরবোঝাই ট্রাক। উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুলাল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘খুব প্রভাবশালী রাজনৈতিক চাপের কারণে তারাকান্দার সাবেক ইউএনওর অনুমতি নিয়েই মাঠটি আমরা ভাড়া দিয়েছি।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্ষমতাধর রাজনৈতিক দলের নেতারা সেখানকার সব ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ করেন। পরিবেশ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তোয়াক্কা না করে এভাবে পাথর ভাঙার পসরা বসিয়েছেন তঁারা। তারাকান্দার বর্তমান ইউএনও জানিয়েছেন, বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দ্রুত এই পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করুক।