করোনা সংক্রমণ রোধ করতে দ্রুত নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। গত বছর সংক্রমণের শুরু থেকে নমুনা সংগ্রহ নিয়ে সমালোচনার শেষ ছিল না। অনেক দেশ যেভাবে অল্প কয়েক দিনে লাখ লাখ মানুষকে পরীক্ষা করে ফেলছে, তার তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে। প্রায় দেড় বছর পর কয়েক দিন ধরে দৈনিক ৫০ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। বর্তমান ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতে সেটি অবশ্য আশাব্যঞ্জক।
এর মধ্যে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার সংখ্যা আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, তেমন একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন ঝিনাইদহ সদরের হরিশংকরপুরের ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাসুম। অন্যদিকে, সরকার যখন মাসে কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, তখন মৌলভীবাজারের বড়লেখায় গ্রামের মানুষকে টিকা নিবন্ধনের কাজ করছে দ্যুতি নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মধ্যে তৃণমূল জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় তরুণদের এমন তৎপরতার খবর কিছুটা হলেও আমাদের স্বস্তি দেয়।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, গত ১৫ দিন পর্যন্ত শতাধিক মানুষের নমুনা সংগ্রহ করেছেন চেয়ারম্যান মাসুম। এর মধ্যে ২৯ জন করোনা পজিটিভ হয়েছেন। ইউনিয়নের ২২ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের মধ্যে অনেকের করোনা উপসর্গ দেখা দিলেও পরীক্ষা না করে বসে থাকায় গোটা ইউনিয়নে সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি হয়। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানিয়ে দেয়, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের পক্ষে নমুনা সংগ্রহের সামর্থ্য নেই। তখন নিজেই এ কাজে নেমে পড়েন মাসুম। নেন স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমতি ও প্রশিক্ষণ। সীমাবদ্ধতার মধ্যেও স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের জন্য তিনি বড় অনুপ্রেরণা হতে পারেন। তাঁর মতো অন্যরাও এগিয়ে আসুক।
করোনা প্রতিরোধে টিকার কোনো বিকল্প নেই। বিপুল পরিমাণ টিকার সরবরাহ বাড়ায় ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। কিন্তু অনলাইনে টিকা নিবন্ধনের বিষয়টি গ্রামের সাধারণ মানুষের জন্য জটিল হয়ে পড়ে। তাদের সে সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি দিতে এগিয়ে এসেছেন দ্যুতির স্বেচ্ছাসেবী তরুণেরা। বড়লেখার হাকালুকি হাওরপারের গ্রামে গ্রামে গিয়ে সুরক্ষা অ্যাপ থেকে বিনা মূল্যে প্রায় ৬০০ মানুষকে টিকা নিবন্ধন করে দিয়েছেন তঁারা। সবার হাতে হাতে নিবন্ধনের কার্ডও পৌঁছে দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে লোকজনকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। গোটা দেশের আনাচে-কানাচে তরুণদের স্থানীয় অনেক সংগঠন আছে, তাঁরাও চাইলে দ্যুতির মতো এভাবে সাধারণ মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারেন। আমরা তৃণমূল পর্যায়ের এমন উদ্যোগগুলোকে সাধুবাদ জানাই।