ঢাকায় যানবাহনের গতি ধারাবাহিকভাবে কমছে। ২০০৪ সালে ঢাকায় যানবাহনের গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। এখন তা ৭ কিলোমিটারে এসে দাঁড়িয়েছে। ২০২৫ সালে তা ৪ কিলোমিটারে দাঁড়াবে বলে বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। এই গতি মানুষের হাঁটার গতির চেয়েও কম। আমরা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। হাঁটার গতিতে যানবাহন চালিয়ে কি আমাদের তা অর্জন করা সম্ভব?

দিনে দিনে ঢাকার আকার বেড়েছে কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই। জলাভূমি ভরাট হয়েছে, খাল দখল ও ভরাট হয়েছে, কোথাও বক্স কালভার্ট বানানো হয়েছে। নর্দমা যথাযথভাবে পরিষ্কার করা হয় না। ফলে বৃষ্টির পানি নামার এখন আর পথ নেই। বিশৃঙ্খলা রুখতে ঢাকা নিয়ে ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান হয়েছে, তা মন্ত্রিসভায়ও পাস হয়েছে, কিন্তু তা বাস্তবায়ন থেকে সরে এসেছে সরকার। সামান্য বৃষ্টিতেই ঢাকা এখন তলিয়ে যায়। জলাবদ্ধ এক নগরীর নাম এখন ঢাকা। জলাবদ্ধতা এবার রাস্তার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে নেই সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ, এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে না। সবকিছু মিলিয়ে ঢাকার রাস্তার অর্ধেকই এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

ঢাকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সংখ্যা পঞ্চাশের বেশি। এর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কথা আমরা বছরের পর বছর শুনে আসছি। এই সমন্বয়ের জন্য আমাদের আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে? নর্দমা ও নর্দমা ব্যবস্থাপনা নিয়ে ঢাকা ওয়াসা ও দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যকার বিরোধ বহু দিনের পুরোনো। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের টনক বলে কিছু থাকলে এত দিনে এর একটা বিহিত হয়ে যেত।

নগরীর উন্নয়নে নানা প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, সেগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিন্তু এমন অপরিকল্পিতভাবে এগুলো হচ্ছে যে একটির জন্য অন্যটি অকার্যকর হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন সংস্থা নিজেদের মতো করে প্রকল্প বানাচ্ছে আর সেগুলো পাসও হয়ে যাচ্ছে। ‘উন্নয়ন’ হচ্ছে, ‘সৌন্দর্যবর্ধনের’ নানা কাজও হচ্ছে কিন্তু সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করে দেখার কেউ নেই, কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। এত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঢাকাকে দেখার আসলে কেউ নেই। কোনো আধুনিক শহর এভাবে চলে না।

ঢাকাকে বাসযোগ্য রাখতে হলে একটি সামগ্রিক ও সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজে এখনই হাত দিতে হবে। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে ভাগ করে কাজগুলো বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে। এ জন্য লাগবে একটি শক্তিশালী কর্তৃপক্ষ। এখানে বিলম্ব করার কোনো সুযোগ নেই।