জাতীয় অগ্রাধিকারে শিক্ষা না থাকা দুর্ভাগ্যজনক

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। শিক্ষাবিদ ও লেখক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন চার দশকের বেশি সময়। বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসে (ইউল্যাব) ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক। এ ছাড়া তিনি জাতীয় জাদুঘর ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। করোনাকালে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষতি এবং তা থেকে উত্তরণে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন এই শিক্ষাবিদ

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
প্রশ্ন:

প্রথম আলো: করোনাকালে সবকিছু খোলা থাকলেও প্রায় ১৫ মাস ধরে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে আপনি কতটা যৌক্তিক মনে করেন?

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রায় সব দেশের বিজ্ঞানীদের পরামর্শ এই যে করোনাজীবাণুর সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে নামলেই কেবল তা সম্ভব। তা না হলে শিক্ষার্থীরা এই জীবাণু বহন করে পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের মধ্যে তা সংক্রমিত করতে পারে। শিক্ষক ও অন্যরাও সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকতে পারেন। আমাদের দেশে সংক্রমণের হার কখনো ৮ থেকে ৯ শতাংশের নিচে নামেনি। এখন তো কোনো কোনো জেলায় ৯০ শতাংশের বেশি। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে তাই সরকারের এ সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক ভাবার কারণ নেই। একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে আমিও হতাশ হই। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিলে যদি শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হতো, তাদের মাধ্যমে তাদের পরিবারের লোকজন সংক্রমিত হতেন, তার দায় তখন সরকারের ওপরই পড়ত।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: সরকারের কাছে কি কোনো বিকল্প ছিল না?

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: সরকারের সামনে বিকল্প ছিল ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া। কিন্তু এ নিয়ে সুষ্ঠু পরিকল্পনার, বিশেষ করে সব শিক্ষার্থীকে এর আওতায় আনার ক্ষেত্রে—উদ্যোগের অভাব ছিল। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, সারা দেশের সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ সুষ্ঠুভাবে অনলাইন শিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। তাদের কম্পিউটার, অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট সংযোগ—এসবের অভাব ছিল। এতে বরং ডিজিটাল বৈষম্যটি প্রকট হয়েছে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: করোনার কারণে শিক্ষাব্যবস্থায় যে ধস নামল, তা কাটিয়ে ওঠার উপায় কী? একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে আপনার পরামর্শ জানতে চাইছি।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: ধস কাটিয়ে ওঠা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। এর জন্য প্রথমেই প্রয়োজন কোভিড সংকটের অবসান অথবা সংক্রমণের হার ৫-এর নিচে নামা। দেশের সব নাগরিক সচেতন না হলে তা দ্রুত সম্ভব হবে না। পাশাপাশি প্রয়োজন হবে একটি সুনির্দিষ্ট পথনির্দেশনার। যত দিন কোভিড সংকট থাকবে, অনলাইন শিক্ষা সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে যেতে হবে। এ জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীর যাতে ইন্টারনেট সংযুক্তিসহ ল্যাপটপ বা অ্যান্ড্রয়েড ফোন থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষকদের অনলাইন ক্লাস নেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে গেলে ছুটিছাটা কমিয়ে ক্লাস চালিয়ে নিতে হবে। স্থগিত পরীক্ষাগুলো নিতে হবে, তবে সারা দেশে একযোগে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা না নিয়ে ধাপে ধাপে বিভিন্ন বোর্ডে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ের যেসব শিক্ষার্থী কোচিং করে কিছু অর্থ উপার্জন করেন, তাঁদের পিছিয়ে পড়া স্কুলশিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। এ জন্য এঁদের, শিক্ষকদের, শিক্ষাসংশ্লিষ্ট অন্যদের ভালো সম্মানী ও শিক্ষার্থীদের অনলাইন শিক্ষায় অংশ নিতে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। এতে কার্পণ্য করা যাবে না।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: উচ্চশিক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে বেশ বৈষম্য আছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে যেসব শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে, তারা অনেক সুযোগ থেকে বঞ্চিত। করোনাকালে সেই বৈষম্য আরও প্রকট হলো।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: অবশ্যই। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে বৈষম্য সব সময়ই ছিল, এখন আরও বেড়েছে, বিশেষ করে শিক্ষার বেসরকারীকরণ ও উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে তা ব্যাপক হওয়ার পর। ডিজিটাল বৈষম্য তো অনতিক্রম্য হতে যাচ্ছে। গ্রাম-শহরের মধ্যে অর্থনৈতিক যে বৈষম্য ছিল, কোভিড তা আরও ব্যাপক করেছে। সামাজিক বৈষম্যও বাড়ছে। এর প্রভাবে হতাশা সৃষ্টি হবে, উদ্যোগেরও অভাব দেখা দেবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: শিক্ষক ও শিক্ষার্থী হিসেবে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতা আপনার আছে। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে জানতে চাইছি, বাংলাদেশের শিক্ষার মূল সংকট কোথায়? রাষ্ট্রের সামর্থ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি, না দুটোই? স্বাধীন বাংলাদেশে যে শিক্ষাব্যবস্থা ও কাঠামোর প্রয়োজন ছিল, তার ধারেকাছেও কেন যেতে পারলাম না?

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: রাষ্ট্রের সামর্থ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি—এ দুইয়ের মিলন না হলে শিক্ষার উন্নতি হয় না। বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হলো, আমাদের সামর্থ্যের অভাব ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ইতিবাচক। তাঁর অনুপ্রেরণাতেই সেই ১৯৭৪ সালে কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন এক ভবিষ্যৎমুখী শিক্ষা–পরিকল্পনা তৈরি করে, যা বাস্তবায়িত হলে আজ শিক্ষায় আমরা অনেক দূর যেতে পারতাম। অথচ আজ আমাদের সামর্থ্য আছে, দৃষ্টিভঙ্গিটা আগের মতো নেই। শিক্ষার মূল সংকট একে জাতীয় অগ্রাধিকারের শীর্ষে না রাখা, এটিকে বিনিয়োগের শ্রেষ্ঠ ক্ষেত্র হিসেবে না দেখা, এর বিস্তার ঘটানোর পাশাপাশি মানের দিকে অভিনিবেশ না দেওয়া। ভালো শিক্ষার্থী তৈরি করতে পারেন ভালো শিক্ষক, কিন্তু শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে আকর্ষণীয় করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমাদের অর্থমন্ত্রীরা বাজেট
তৈরির আগে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন, কিন্তু শিক্ষাবিদদের সঙ্গে কথাও বলেন না। বাজেটের ঝোঁকটা কোন দিকে যাওয়ার কথা, এ থেকে তা বোঝা যায়।

দৃষ্টিভঙ্গিগত আরেকটি সমস্যা আছে এবং তা হলো একটি সক্রিয় সুষ্ঠু শিক্ষানীতি বা পরিকল্পনার অভাব। আমরা মেগা প্রকল্পে, ব্যবসা-বাণিজ্যে বেশি মনোযোগী। এগুলোর অবশ্যই প্রয়োজন আছে এবং মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য সরকারকে ধন্যবাদ, তবে শিক্ষাকে এসব থেকেও বেশি গুরুত্ব না দিলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ঢেউ এসে পড়লে ব্যবসা-বাণিজ্যও যে টিকিয়ে রাখা যাবে না, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতেও শীর্ষে ওঠা হবে না, এ কথাটাও বুঝতে হবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আমাদের শিক্ষা খাতে বরাদ্দের হার তুলনামূলক কম। এই হিসাবেও শুভংকরের ফাঁকি আছে বলে অনেকের অভিযোগ। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: শিক্ষায় আমাদের বাজেট বরাদ্দ এখনো জিডিপির ২ শতাংশের সামান্য ওপরে, অথচ হওয়ার কথা ছিল ৪ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে। এ ক্ষেত্রে নেপাল, পাকিস্তান ও ভারত আমাদের থেকে এগিয়ে। যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তাতে প্রযুক্তিও অন্তর্ভুক্ত। শুভংকরের এই ফাঁকিটা প্রকাশ্য, তবে অপ্রকাশ্য ফাঁকি আরও আছে। শিক্ষা নিয়ে বড় বড় প্রকল্প হয়, গাড়ি কেনা, বিদেশ সফর হয়, কিন্তু দিনের শেষে এর প্রায় কিছুই শিক্ষার কাজে লাগে না। শিক্ষাক্ষেত্রের দুর্নীতিও শিক্ষাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: ২০১০ সালে বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষণা করা হলো। কিন্তু গত ১০ বছরে শিক্ষা খাতে কোনো পরিবর্তন এল না। এ জন্য কারা দায়ী—রাজনৈতিক নেতৃত্ব না আমলাতন্ত্র।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: দুই পক্ষই, এবং এদের সঙ্গে শিক্ষকদের নানা সংগঠন, শিক্ষাবিদ ও নাগরিক সমাজের একটা বড় অংশও, যাঁরা শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের পক্ষে একটা শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলতে পারতেন। এর কারণ তাঁদের দলীয় রাজনীতিতে নাম লেখানো। ২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে প্রতিক্রিয়াশীল কিছু মহলের আপত্তি ছিল। সেসব আমলে নিয়ে এতে কিছু পরিবর্তনও আনা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও এটি বাস্তবায়িত হলে শিক্ষায় অনেক মানগত পরিবর্তন হতে পারত। এটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার মূলে আছে শিক্ষাকে আমাদের জাতীয় অগ্রাধিকারের শীর্ষে না রাখা। উচ্চশিক্ষা নিয়েও একটি কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে, সেটিও ফাইলের নিচে চাপা পড়ে আছে। এসবের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন দ্রুতই করতে হবে। তা না হলে এর জন্য আমাদের অনেক চড়া মূল্য দিতে হবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: সরকার জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ্য শিক্ষক ও ন্যূনতম অবকাঠামোগত সুবিধা নেই। সরকারিভাবে বেশি বিশ্ববিদ্যালয় খোলা, না প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার অবকাঠামোটি সুদৃঢ় করা জরুরি?

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের প্রয়োজন, কিন্তু সে জন্য একটি সুনির্দিষ্ট পথনির্দেশিকা থাকা উচিত—অর্থাৎ কোনো অঞ্চলে, কখন, কেন, কী বিষয়ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে হবে, এ সম্পর্কে ১০ থেকে ৩০ বছরের একটি পরিকল্পনা। রাজনৈতিক চাপে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা একেবারেই উচিত নয়। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় খোলা যায়, কিন্তু সমীক্ষা না করে তা–ও নয়। আমাদের প্রয়োজন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার দিকে মনোযোগ দেওয়া, এই শিক্ষাকে মানসম্পন্ন করা; টেকনিক্যাল ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে জোর দেওয়া। ২০ শতাংশ সক্ষমতায় বিশ্ববিদ্যালয় চালানো, শিক্ষিত বেকার তৈরি করা—এসব থেকে আমাদের নিবৃত্ত হতে হবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি কলেজ পর্যায়ে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর শিক্ষা সংকোচন করার কথা বলেছেন। কিন্তু কলেজগুলোয় নির্বিচার এসব কোর্স খোলা হলো কীভাবে? শিক্ষার এই সর্বনাশের জন্য কাকে দায়ী করবেন?

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: কলেজগুলোয় স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর বিষয় খোলার পেছনে ছিল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তির সুযোগ সীমিত হওয়া, রাজনৈতিক চাপ, কোনো স্পষ্ট পথনির্দেশিকার অভাব এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছাত্রসংগঠনগুলোর সক্রিয়তা। এটি সব সরকারের সময়েই ঘটেছে। এ জন্য মূলত দায়ী ১৯৭৫-পরবর্তী রাজনৈতিক ও শিক্ষার ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তন।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় দলীয় রাজনীতির পাশাপাশি দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ-বাণিজ্যের রেশ এখনো চলছে। অবৈধ প্রক্রিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্তরা আন্দোলন করছেন। আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ক্যাম্পাসেই থাকতেন না বলে অভিযোগ আছে। উচ্চশিক্ষাকে যাঁরা নিম্নগামী করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার কি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে মনে করেন?

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: কিছু উপাচার্যের কারণে দায়টা এখন সবার কাঁধেই যাচ্ছে, এটি দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু এসব দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারিতার মূলে আছে উচ্চশিক্ষাঙ্গনের দলীয় রাজনৈতিকায়ন, লোভ ও ক্ষমতার কাছে কিছু শিক্ষকের নীতিনৈতিকতা বিসর্জন এবং দলীয় বিবেচনায় দায়মুক্তি। সরকার হয়তো চায় না শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে, কিন্তু তার পেছনে রাজনৈতিক একটি বিবেচনাও কাজ করে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনি যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক ছিলেন, সেই বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষে পড়েছে। এটি নিশ্চয়ই আনন্দের। কিন্তু একদা প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয় এখন বিশ্বসূচকে অনেক নিচে। আপনার অনুভূতি কী?

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: প্রাচ্যের অক্সফোর্ড অর্থ এই নয় যে বিশ্বব্যাপী শিক্ষাদীক্ষায় এর সুনাম ছিল। বরং ঢাকা এবং একই সময়ে প্রতিষ্ঠিত এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ও সাজানো হয়েছিল অক্সফোর্ডের শিক্ষাদর্শন অনুযায়ী। ওই বিশ্ববিদ্যালয়কেও প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো। বিশ্বসূচক তৈরি হয়েছে পশ্চিমের বাস্তবতা অনুযায়ী, সে জন্য এই সূচকে উঁচু জায়গা না পাওয়ায় আমার ততটা খেদ নেই, যতটা দেশবাসীর প্রত্যাশাসূচকে এর নিচে নেমে যাওয়ায়। শিক্ষকদের পেশার রাজনৈতিকায়ন, ক্ষতিকর ছাত্ররাজনীতির প্রভাব, বাজেট বরাদ্দের—বিশেষ করে গবেষণায়—অপ্রতুলতা, ভৌত অবকাঠামোর দুর্বলতা, এসবের কারণে হয়তো কোনো সূচকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জায়গা করে নিতে পারবে না। তবু আমার অনুভূতি গর্বের। এই বিশ্ববিদ্যালয় না থাকলে আমরা স্বাধীনতার স্বাদ থেকে বঞ্চিতই থাকতাম। আমার বিশ্বাস, বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনা চলতে থাকলে ব্যক্তি থেকে নিয়ে সরকার—সবাই একসময় উদ্যোগী হবেন এবং এই বিশ্ববিদ্যালয় তার হৃত গৌরব ফিরে পাবে।

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: আপনাকেও ধন্যবাদ।